২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ৬ দিন পর যুবক নিহত

কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ৬ দিন পর যুবক নিহত। - ছবি : নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার সুব্রত মণ্ডল জয় নামে এক যুবক ছয় দিন পর নিহত হয়েছেন। রোববার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত সুব্রত মণ্ডল (২২) নগরীর দেওভোগ এলাকার সুরেশ চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন হোসিয়ারি শ্রমিক ছিলেন।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত ১৬ মে রাতে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।

তার মৃত্যুর ঘটনায় বড় বোন শম্পা মণ্ডল সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদি বলেন, গত ১৬ মে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ছোট ভাইকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত আড়াইটায় রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় আসামিরা। পরে সুব্রতকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখনে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) শয্যা না পেয়ে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। রোববার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সুব্রত।

নিহতের বড় বোন শম্পা বলেন, তার ভাইয়ের সারা শরীরে গুরুতর জখম ছিল। বা হাতের তিনটি আঙুলের সামনের অংশ কেটে দিয়েছে আসামিরা। সুব্রত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন নিহতের বোন।

এদিকে সুব্রত মারা যাওয়ার পূর্বে ধারণ করা একটি ভিডিওতে তাকে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে কয়েকজনের নাম বলেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

ওই ভিডিওতে সুব্রত বলেন, তার উপর হামলাকারীরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ মনিরুজ্জামানের অনুসারী। গত সিটি নির্বাচনে সুব্রত সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের পক্ষে ছিলেন। নির্বাচনের জেরে সুব্রতের সাথে হামলকারীদের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

সুব্রত হত্যা মামলায় সায়েম ওরফে ইয়াবা সায়েম (৩০), সাজিদ ভূঁইয়া (৩৬), নাইম উদ্দিন বাবু (৩৫), দোলন (২৫), আল-আমিন (২৫), নোমান (২২), প্রণয় (২২), রাকেশ (২০), সুদেব (৩২), অনিক রাজিব (২৬) ও মানিককে (২৫) আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, আসামিদের সাথে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সখ্যতা রয়েছে। তাদের মধ্যে মানিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

যদিও এই বিষয়ে কথা বলতে নাসিক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের মোবাইলফোনে কল করলে তার একান্ত সচিব ইমরান জানান, কাউন্সিলর অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে শয্যাশায়ী। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে সুব্রতকে নির্যাতনের ঘটনায় কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা নেই।

সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, সুব্রতর পুরো পরিবার নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছে। করোনাকালেও ওদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। সেই সুবাদে সুব্রত আমার কর্মী ছিল। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে এমন নির্মম নির্যাতন কেউ কাউকে করতে পারে সেইটা আমার বোধগম্য না। সুব্রত নিজেই তাকে নির্যাতন করা লোকজন কাউন্সিলর মনিরের কর্মী বলে ভিডিওতে বলেছে। ও (সুব্রত) যাদের নাম বলেছে তারা সকলেই মনিরের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছে। এইটা তো এলাকার সকলেই জানে।

প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকতেই পারে। কিন্তু নির্বাচন শেষে তা নিয়ে তো এই ধরনের নির্মম ঘটনা ঘটানো কোনোভাবেই কাম্য না। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, তিনি শনিবার থানায় যোগদান করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে রাতেই অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। তখন হত্যা চেষ্টার ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সকালে ভুক্তভোগী মারা যাওয়ায় এই মামলায় হত্যার ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

ওসি আরো বলেন, এই ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু হয়েছে। মানিক নামে এজাহারনামীয় এক আসামিকে সন্ধ্যায় গ্রেফতারও করা হয়েছে। অনেকে অনেকের সম্পৃক্ততার কথা বলতে পারে কিন্তু তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরই আমরা গ্রেফতার করবো।


আরো সংবাদ



premium cement