১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুমাইয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল মনির

সুমাইয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল মনির-প্রেমের সম্পর্ক-হত্যারহস্য উদঘাটন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে মনির হোসেন এবং ইনসেটে সুমাইয়া - ছবি : নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে গলা কেটে হত্যার ১০ ঘণ্টার মাথায় হত্যারহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব-১২।

এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন আহত মনির হোসেনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মনির সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সুমাইয়ার (১৫) সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মনিরের (১৭)। মনির পেশায় ট্রাকের হেলপার এবং অত্যন্ত বদমেজাজি ও নেশাগ্রস্ত। তিনি সুমাইয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিতেন এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। ধীরে ধীরে সুমাইয়া মনিরের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে মনির ক্ষীপ্ত হয়ে সুমাইয়াকে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল বলে উঠে আসে র‌্যাবের তদন্তে।

বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বুধবার সকালে কালিহাতীর এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজের সামনের একটি ভবন থেকে সুমাইয়ার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। সুমাইয়ার মায়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৭টায় সুমাইয়া প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করতেন না। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম দীর্ঘ সময় তদন্ত করে জানতে পারে, মনির নামে এক তরুণের সাথে ভিকটিমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য। মনিরের বন্ধুর মোবাইলের ছবি ও ভিডিওর সূত্র ধরে উদঘাটন করা হয় হত্যা রহস্য।

র‌্যাব জানায়, সুমাইয়ার সাথে মনিরের দীর্ঘ দু’বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনির অত্যন্ত বদমেজাজি এবং নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি ভিকটিমের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিতেন এবং তাকে নির্যাতনও করতেন। ধীরে ধীরে সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে দু’মাস আগে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে মনির অত্যন্ত রাগান্বিত হন। গত ৫ থেকে ৭ দিন আগে সুমাইয়াকে রাস্তায় একা পেয়ে মারধর করেন মনির। এতে সুমাইয়ার কান দিয়ে রক্ত চলে আসে এবং চিকিৎসা করাতে হয়। এই মারধরের দৃশ্য মনির ভিডিও করে বন্ধুদের দেখান। হত্যাকাণ্ডের এক দিন আগে রাত ১০টার দিকে মনির তার ঘনিষ্ঠ ৫ থেকে ৬ জন বন্ধুকে নিয়ে এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজে মিটিং করে এবং সুমাইয়া ও তার নতুন প্রেমিকের উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় মনির পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন এবং ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়।

উদ্ধারকৃত ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মনির একটি সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করে এবং বিভিন্ন স্টাইলে এই চাকুর ব্যবহার করার ভিডিও করে। সুমাইয়ার লাশের পাশ থেকে সেই রক্তাক্ত সুইচ গিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবেই র‌্যাবের ছায়া তদন্তে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে মনিরকে শনাক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, সুমাইয়া কালিহাতী উপজেলার পালিমা (উত্তরপাড়া) গ্রামের মো: ফেরদৌসের মেয়ে। তিনি এলেঙ্গার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সাথে থেকে এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়তেন। এছাড়া মনির হোসেন একই উপজেলার ভাবলা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। বুধবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে সুমাইয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ মাগরিব জানাজার নামাজ শেষে পালিমা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement