২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আলো রাণীর জীবন সংগ্রামের গল্প

বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করছেন আলো রাণী - ছবি - নয়া দিগন্ত

আলো রাণী দাস। বয়স ৫০ বছর। জন্ম হয়েছিল অভাবি বাবার সংসারে। যেখানে দু’বেলা ভাত জোটানো কষ্টকর ছিল। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে আলো রাণী বড়। তাই অল্প বয়সেই বাবা বিয়ে দিয়ে দেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের এলাকার দিন মজুর গোপিনাথ চন্দ্র দাসের সাথে।

বিয়ের পর স্বামীর সংসারেও অভাব। দিনমজুর স্বামীর উপার্জনে দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্টের ছিল।

এরই মধ্যে সংসারে একে একে তিন সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও বাঁশের ঝুড়ি তৈরি শুরু করেন।

পরিশ্রমের কাজ হলেও নিজ বাড়িতেই ছোট পরিসরে প্রতিদিন ঝুড়ি তৈরি করছেন আলো রাণী। প্রায় ৩০ বছর হলো কাজটি করছেন।

নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প এভাবেই জানান আলো রাণী দাস।

তিনি জানান, সংসারের পাশাপাশি ঝুড়ি, পলো, কুলাসহ বিভিন্ন ধরণের বাঁশের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয়। দূরদুরান্ত থেকে দেখতে মানুষ হাতের কাজ দেখে সুনাম করেন। ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১০ ঝুড়ি তৈরি করেন। প্রকারভেদে প্রত্যেকটি ঝুড়ি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আলো রাণী বলেন, সন্তানরা সবাই বিয়ে করে নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বাঁশের ঝুড়ি থেকে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার-চিকিৎসা খরচ হয়েও অবশিষ্ট টাকা সঞ্চয় করেন। যা আগে সন্তানদের পেছনে খরচ করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ঠান্ডু মিয়া বলেন, আলো রাণী দীর্ঘদিন এখানে বাঁশের কাজ করছেন। তার কদর আশপাশের এলাকায়ও রয়েছে। নিজেই তৈরি করে দেন ঝুড়ি। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করে ধরে রাখতে সব ধরণের বাঁশের কাজ করেন তিনি।

সাটুরিয়া থেকে দেখতে আসা উজ্জল মিয়া বলেন, এখানে এসে সব কিছু ঘুরে দেখে খুবই ক্লান্ত লাগছিলো। আলো রাণীর কাজ দেখে খুবই ভালো লাগলো।

আলো রাণীর স্বামী গোপিনাথ দাস বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত শেষে বিভিন্ন ধরণের ঝুড়ি তৈরি করা হয়। প্রকারভেদে প্রত্যেকটি ঝুড়ি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি আক্তার বলেন, সমাজে অধিকাংশ নারীরাই সংগ্রাম করে জীবন যাপন করছে। আলো রাণী তাদেরই একজন। ওই নারী আবেদন করলে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement