২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরকীয়ার জেরে হাতের রগ কেটে স্ত্রীকে খুন, স্বামী গ্রেফতার

পরকীয়ার জেরে হাতের রগ কেটে স্ত্রীকে খুন, স্বামী গ্রেফতার - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে উদ্ধারকৃত লাশের (নারীর) পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় নিহতের স্বামীকে সোমবার কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

স্ত্রীর পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহের জেরে হাতের রগ কেটে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই নারী গার্মেন্টস কর্মী জরিফুলকে (৩৫) খুন করেছেন তার স্বামী। ক্লুলেস এ ঘটনার মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই।

এ ঘটনায় গ্রেফতার হলেন- রাজু আহম্মেদ (৩১)। তিনি জামালপুরের ইসলামপুর থানাধীন পাঁচবাড়ীয়া এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।

গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও বনবিভাগের মাস্টারবাড়ি অফিসের পাশে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতর এক নারীর (৩৫) লাশ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। নিহতের ডান হাতের কব্জিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রগ কাটা ও গলায় ওড়না পেঁচানো এবং গলাসহ ডান কানের ও গালের বাম পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। খবর পেয়ে গাজীপুর পিবিআই ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে লাশের পরিচয় জরিফুল (৩৫) বলে শনাক্ত করে এবং নিহতের আত্মীয় স্বজনকে খবর দেয়। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই সুজা মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তকালে গাজীপুর পিবিআই জেলা স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিগ্রহণ করে। পিবিআই’র তদন্তকালে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত নিহতের স্বামী রাজু আহম্মেদকে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ব্লেড উদ্ধার করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ক্লুলেস ঘটনার মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সালে প্রেম করে জরিফুলকে বিয়ে করেন রাজু। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন সফিপুর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে রাজু স্থানীয় লিবার্টি গার্মেন্টসে ডায়িংয়ের কিউসি পদে এবং তার স্ত্রী জরিফুল মৌচাক নিট কারখানায় চাকরি করেন। একপর্যায়ে জরিফুল পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া রুবেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসে ওই বাসা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেন রাজু।

এ দিকে জরিফুল বেতনের টাকা স্বামীকে না দিয়ে তার ছোট ভাই সুজার মাধ্যমে মা-বাবার (জরিফুলের) কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে রাজুর সাথে তার স্ত্রী জরিফুলের মাঝে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতেও তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। এ সময় রাজুর বাবা মার নাম নিয়ে অনেক গালাগাল করেন জরিফুল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জরিফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজু।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে কারখানায় খাবারের বিরতির সময় বিশেষ কাজ থাকার কথা বলে স্ত্রী জরিফুলকে মিনিবাসে ও অটোরিকশায় করে মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকায় নিয়ে যান রাজু। তারা উদ্যানের গজারী বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকেন। নির্জন এলাকা দেখে জরিফুল দাঁড়িয়ে পড়লে তাকে খুন করা হবে বলে জানায় রাজু। এ সময় জরিফুল চিৎকার দিতে চাইলে তার ঘাড় ও মুখ চেপে ধরেন রাজু। ঘটনার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জরিফুল পড়ে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাত পান। পরে জরিফুলের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাজু। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ব্লেড দিয়ে স্ত্রী জরিফুলের ডান হাতের কব্জিতে কেটে দিয়ে লাশ ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন রাজু।


আরো সংবাদ



premium cement