১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাতে কান্নার শব্দ, রাস্তার পাশে মিলল নবজাতক

রাতে কান্নার শব্দ, রাস্তার পাশে মিলল নবজাতক -

রাত ১১টা। গ্রামীণ পরিবেশে চতুর্দিকে অন্ধকার। সুনশান নিরবতা। তারই মাঝে হঠাৎ নবজাতকের চিৎকার। কিছুক্ষণ থেমে থেমে ভেসে আসছে শিশুর কান্নার শব্দ। রাস্তার কাছাকাছি বাড়ি মো: লাভলু মিয়ার। কান্নার উৎস খুঁজতে লাভলুসহ পরিবারের সদস্যরা বের হয়ে আসেন রাস্তায়। অবশেষে মুঠোফোনের আলোয় মিললো এক ফুটফুটে নবজাতক মেয়ে। মাটিতে গড়াগড়ি করছিল সদ্য পৃথিবীতে আসা নবজাতকটি। গায়ে ছিল না কোনো কাপড়। নরম শরীরে রক্তের দাগ। শিশুটির ঝুলে থাকা নাভীতে ধুলা ময়লা জড়িয়ে একাকার।

মুহূর্তেই নিষ্পাপ শিশুটিকে মাতৃমমতায় কোলে তুলে নেন লাভলুর স্ত্রী বাসনা আক্তার। বাড়ি নিয়ে দ্রুত পরিষ্কার করে কাপড়ে জড়িয়ে মুখে দেন গাভীর দুধ। পরম মমতায় মাতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে কাটান সারারাত। শিশুটির নামও রাখা হয়, বিলকিছ।

তবে মঙ্গলবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হদিস মেলেনি নবজাতকের মা-বাবার।

ঘটনাটি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুটিয়াজানী গ্রামের।

মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ওয়াদিয়া শাবাব, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব, ওসি তদন্ত মোহাব্বত খান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, এসআই আল মামুনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই মেয়ে নবজাতককে লাভলুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

বাসনা আক্তারের শাশুড়ি লাইলী বেগম বলেন, সোমবার রাতে তার স্বামী নদী থেকে মাছ ধরে আনেন। রাত ১১টার দিকে তিনি বাড়ির টিউবওয়েলের পাশে মাছ ধোয়ার সময় শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। পরে তার স্বামীকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে দেখতে পান রাস্তায় মাটিতে শুয়ে কাঁদছিল ওই শিশুটি। এ সময় পুত্রবধূ বাসনা বাচ্চাটিকে তুলে আনে। তিনি জানান, নবজাতককে দেখে মনে হয়েছে, কয়েক ঘণ্টা আগে তার জন্ম হয়েছে।

পরে বিষয়টি স্থানীয় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মেম্বর নাছিমা আক্তার মল্লিকা প্রশাসনকে খবর দেয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মঙ্গলবার ঘিওর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে বাসনা আক্তারের কোলে শুয়ে আছে শিশুটি। বেশ আন্তরিকতার সাথে ডাক্তার-নার্সরা চিকিৎসা দিচ্ছেন মা-বাবার পরিচয়হীন নবজাতককে।

ঘিওর থানার ওসি মো: রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, রাত ১১টার দিকে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় গ্রামবাসী। সকালে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা গিয়ে শিশুটিকে ঘিওর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এই শিশুর অভিভাবকদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।

শিশুটির উদ্ধারকারী বাসনা আক্তার (৩৩) বলেন, মেয়ে শিশুটিকে পাওয়ার পর থেকে সারারাত আমার বুকে ছিল। হাসপাতালে আনার পর থেকে আমার কাছেই রয়েছে। অনেক মায়া পরে গেছে। আমার কোনো মেয়ে নেই। এই মেয়েটি আমার মেয়ে হিসেবে মানুষ করতে চাই।

ঘিওর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাসিব আহসান জানান, শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তবে আরো নিবীড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement