২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদ্মায় স্পিডবোট উল্টে ২৬ জন মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে মামলা

বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া স্পিডবোটটি - ছবি : নয়া দিগন্ত

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় শিবচর থানায় মামলা করেছে নৌ-পুলিশ। এতে স্পিডবোটের মালিক, চালক, ঘাটের ইজারাদারসহ চারজনকে আসামি করা হয়।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন।

শিবচর থানা ও নৌ-পুলিশের সূত্র জানায়, বাংলাবাজার ফেরিঘাটের আসার পথে বালুবাহী বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় এক নারী, তিন শিশুসহ ২৬ জন মারা যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিবচর উপজেলার চর জানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খানের ছোট ভাই ও শিমুলিয়া ঘাটের ইজারাদার শাহ আলম খান, স্পিডবোটের মালিক চান্দু মিয়া ও জহিরুল ইসলাম এবং স্পিডবোটটির চালক শাহ আলমকে।

এত চোখ এড়িয়ে স্পিডবোটটি চলছিল কীভাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি মিরাজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাতে চারজনকে আসামি করে নৌ-পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলাটি তদন্ত করবে নৌ-পুলিশ। আসামি ধরবেও তারা। প্রয়োজনে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘চারজন আসামির কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার নেই। স্পিডবোটটির চালক পুলিশের নজরদারিতে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাত দুটার দিকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে চর জানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় আসামি সবার বাড়ি মাওয়া এলাকায়। রাতে মামলা হলেও আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আসামি ধরার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আসামিদের গ্রেফতারে নৌ-পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগসহ একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মামলায় স্পিডবোটের বেপরোয়া গতিতে চলাচল, লাইসেন্সহীন, অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ একাধিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এখন থেকে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে নৌ-পুলিশ।’

সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩২ জন যাত্রী বহন করে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে যাচ্ছিল স্পিডবোটটি। এটি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের কাছাকাছি এলে ঘাটের কাছে নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের পেছন দিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই স্পিডবোটটি উল্টে বাল্কহেডের নিচে চলে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাঁতরে তীরে ওঠেন ছয়জন। তাদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে এক নারীর মৃত্যু হয়।

নিহত সবার লাশ রাখা হয় কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। দুপুর থেকে শুরু হয় লাশের পরিচয় শনাক্তের কাজ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যেই সব কটি লাশের পরিচয় শনাক্ত শেষে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement