২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় কর্মহীন ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক

করোনায় কর্মহীন ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক - ছবি- সংগৃহীত

করোনার প্রভাবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ব্র্যান্ড তাঁতশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। বন্ধ হয়ে থেকে শত শত তাঁত কারখানা। থমকে গেছে তাঁতপল্লীর খটখট শব্দ। বেকার হয়ে পড়েছেন অন্তত ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক। টানা ২০ দিন কর্মহীন থাকায় আয়ের পথ বন্ধ। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে তাঁতশ্রমিকরা। অন্য দিকে ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসার আশা করেছিলেন, তাও মুখ থুবড়ে পড়েছে করোনায় চলমান লকডাউনের কারণে। লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়ছে কারখানা মালিকরা।

কারখানা মালিকরা জানিয়েছে, ঈদুল ফিরকে ঘিরে তাদের সারা বছরের উৎপাদন। কিন্তু করোনার কারণে টাঙ্গাইলের করটিয়ার পাইকারি হাটে পাইকার না আসায় বেচা বিক্রি একদম বন্ধ। ফলে মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছেন বেশির ভাগ তাঁত কারখানা।

জানা যায়, উপজেলার সাভার, আগ সাভার, বরাইদ, হামজা, জালশুকা, চাচিতারা, নাশুরপুর ও নতুন ভোঁয়া গ্রামে দুই হাজার পাওয়ার লুম ও হ্যান্ডলুম তাঁত রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এখানকার উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, ওড়না ও থ্রি-পিস দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। সারা বছর কম উৎপাদন হলেও ঈদের প্রায় তিন-চার সপ্তাহ আগে মালিক-শ্রমিক বেশি কাপড় উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু এবার লকডাউনের মধ্যেই ১১টি রোজা চলে গেছে।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ লকডাউন চলবে। ফলে এবার ঈদে আর বিক্রির সুযোগ কম। বাধ্য হয়েই তাঁত কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্তব্ধতা বিরাজ করছে তাঁতপল্লীতে। এতে কারখানা মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে।

সাভার গ্রামর তাঁত মালিক আজিজুর রহমান জানান, করোনায় কাজ বন্ধ। বাড়িতে আছি। কাজ বন্ধ করায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরেক মালিক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁতের কাজ করেই সংসার ও ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতাম। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে তাঁত বন্ধ করে দিয়েছি। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন বিপদে আছি। আমাদের এ দুঃখ দেখার কি কেউ আছে?’

তাঁতশ্রমিক জুলহাস উদ্দিন বলেন, কাজ না থাকায় মালিকপক্ষ তাঁত বন্ধ রেখেছে। ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। সুতাকাটা নারী শ্রমিক রোজিনা আক্তার বলেন, ‘কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।’

সাটুরিয়া হ্যান্ডলুম পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দাউদ হাসান লাভলু জানান, করোনার মহামারীতে তাঁতীরাও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। উপজেলার তাঁতীরা তাঁত কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাঁতিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আর কয় দিন পরেই ঈদ। এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা যেমন বিপাকে রয়েছেন। মালিকরাও বিপাকে পড়েছে।

জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁতশ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন। আর সরকারি সহায়তা পেলে তাঁতীদের সহযোগিতা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement