১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কঠোর লকডাউন, নববর্ষ আর বাজারে আগুন

কঠোর লকডাউন, নববর্ষ আর বাজারে আগুন - ছবি : সংগৃহীত

‘কঠোর লকডাউনেই’ শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ আর পবিত্র মাহে রমজান। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি। কাজ হারানো আর অনিশ্চয়তায় অদ্ভুত একটা অবস্থার মধ্যে আছেন দেশের মানুষ। এর মধ্যেই চলছে ঝুঁকি নিয়ে লকডাউনে বাড়ি ফেরা।

সাধারণ বিবেচনায় মনে হতে পারে অনেকে উৎসবের আমেজে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে ভিন্নতা আছে এমনটাই বলছেন ঘরে ফেরা মানুষরা।

বাড়ি ফেরার অপেক্ষারত আমজাদ আলি বললেন, ‘লকডাউনে বাড়ি যাবো না কী করবো, ঢাকায় বসে খাবো কী, বাসা ভাড়া দেবো কীভাবে?

তিনি রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকান করেন। কিন্তু লকডাউনে দোকান চালাতে পারবেন না। তাই বাড়ি যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই। এখানে থাকলে তিনি কী খাবেন। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

তিনি যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন না চললেও ট্রাকে বা অন্য কোনো উপায়ে যেতে পারবেন বলে জানান।

ধানমন্ডি এলাকার আরেকজন হকার, রাস্তার পাশে ডাব ও লেবু বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে খাবো কী। মরবো নাকি? তাই আমি আমার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। তারপর পুলিশ যদি ধরে নেয় নেবে। কী আর করা যাবে।

সদ্য শেষ হওয়া সাত দিনের যে লকডাউন বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, সেটাকে তারা লকডাউন মনে করে না। কারণ দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন ছাড়া বাস্তবে আর সবই ছিল খোলা। কিন্তু বুধবার থেকে যে সাত দিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে তা কঠোর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সব ধরনের যানবাহন বন্ধ তো থাকবেই। আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইটও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

সীমিত আকারে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। আর খাবার রেস্তোরাঁ খোলা থাকবে শুধু খাবার কিনে নেয়ার জন্য। সব ধরনের অফিস বন্ধ। তবে এবারো পোশাক কারখানা খোলা থাকছে। ব্যাংক শুরুতে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ জরুরি সেবা চালু থাকবে। চালু থাকবে সংবাদমাধ্যম।

লকডাউনে সাধারণের জরুরি প্রয়োজনে বাইরে চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ দেবে পুলিশ। অ্যাপস-এর মাধ্যমে এই পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। অ্যাপসটি এরইমধ্যে চালু হয়েছে। চালুর পর প্রতি মিনিটে গড়ে ১৫ হাজার করে আবেদন হচ্ছে।

লকডাউনের আগের দিন ঢাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। শপিংমল, মার্কেট ও কাঁচাবাজারে ছিল ভিড়। আর ব্যাংকগুলোতে ছিল টাকা তোলার লম্বা লাইন। অনেকেই সাত দিনের বাজার করে রাখছেন। আবার রোজার কারণেও ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। সরকার ছয়টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও বাস্তবে ওই দামে পণ্য মিলছে না। আর টিসিবিও ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির কথা বললেও নির্ধারিত সময়ে ট্রাক আসে না বলে অভিযোগ আছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে শেখ সোহেল নামে একজন ক্রেতা জানান, ‘জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৩০ টাকা হালির লেবু এখন ১২০ টাকা। আর সরকার কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও ওই দামে কোথাও পাওয়া যায় না। আমরা যারা নির্ধারিত আয়ের মানুষ তারা বিপদে আছি।’

দোকানদাররা বলছেন, এখনো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেনি। তবে লকডাউন শুরু হলে সরবরাহ ব্যবস্থা কতটা সচল থাকে তার ওপর পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে।

এ দিকে কঠোর লকডাউন শুরু আগের দিনেও বাইরে বের হওয়ার মানুষের মধ্যে তেমন স্বাস্থ সচেতনতা দেখা যায়নি। মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা খুবই কম। মার্কেট, রাস্তাঘাট বাসষ্ট্যান্ড সবখানেই মানুষের ভিড়।

এর আগে গত বছর করোনার কারণে ৬২ দিন সাধারণ ছুটি ছিলো। আর এ বছর ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল একটা ঢিলেঢালা লকডাউন হয়ে গেল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, ‘এবার যেভাবে হাজার হাজার মানুষকে মুভমেন্ট পাস দেয়া হবে তাতে লকডাউন আর লকডাউন থাকবে না। আর পূর্ণ প্রস্তুতি না নিয়ে লকডাউন করা যায় না। এই লকডাউনে উদ্দেশ্য কী? সাত দিন পর কী হবে?’

তিনি মনে করেন, ‘এটা কোনো পরিকল্পিত লকডাউন নয়। হঠাৎ করে নেয়া একটা সিদ্ধান্ত। তাই মানুষ বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল