২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ছেলেদের শাস্তি চেয়ে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা...

আদালতে মিরজান নেছা - ছবি - নয়া দিগন্ত

মিরজান নেছা। বয়স এক শ’ ছুঁই ছুঁই। সোজা হয়ে এখন আর দাঁড়াতে পারেন না, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। লাঠিই তার একমাত্র ভরসা। অথচ একটা সময় স্বপ্ন দেখেছিলেন, পড়ন্ত বয়সে সন্তানদের সেবায় শান্তিতে থাকবেন। কিন্তু হয়েছে উল্টাটা। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ছেলে ও তাদের স্ত্রীদের মারধরের শিকার হয়ে এখন আদালতে এই বৃদ্ধা মা। তার আবেদনে আদালত শাস্তিও দিয়েছে অভিযুক্ত দুই ছেলেকে। তবে তাদের জামিন দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আদালত প্রাঙ্গনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের আদালতে এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকের বিবেকে নাড়া দিয়েছে।

ছেলেদের বিরুদ্ধে এই বৃদ্ধার দায়ের করা মামলার রায়ের দিন ছিল গতকাল। দু’পক্ষের আইনজীবীদের আইনি লড়াইয়ে কথা কাটাকাটির সময় বাদির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিরজান নেছা বলেন, ‘আমার বাড়িতে চলেন, দেখেন ছেলেরা আমাকে কেমন করে মারে।’

পরে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমদাদুল হক মামলার রায়ে মাকে মারধর করায় দুই ছেলেকে এক মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। একইসাথে ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের শর্তে অভিযুক্ত দুই ছেলেকে জামিন দেয় আদালত। কিন্তু ছেলেদেরকে জামিন দেয়ায় বৃদ্ধা আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেদের এখনই কারাদণ্ড চান তিনি।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কেয়টখালী গ্রামে স্বামী সমন শেখকে (১০৫) নিয়ে বাস করেন বৃদ্ধা মিরজান নেছা। তাদের তিন ছেলে ও সাত মেয়ে। কিন্তু এই দম্পতির খোঁজ নেয় না সন্তানরা। বরং তাদের বিপুল সম্পত্তি বৃদ্ধ বয়সে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা করার কথা বলে দুই ছেলে জালাল (৪২) ও জামাল (৫২) এক একর ৩৪ শতাংশ জমি অসিয়ত নামা দলিল করে দিতে বলে মা-বাবাকে। এতেও রাজি হয় বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু ওই দুই ছেলে অসিয়ত করার কথা বলে বৃদ্ধ মা-বাবাকে সাব রেজেস্ট্রি অফিসে নিয়ে ভুল বুঝিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের চার একর ২০ শতাংশ সম্পত্তি দান দলিল লিখিয়ে নেন। এ কথা জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতির আরেক ছেলে কামাল হোসেন।

তিনি আরো জানান, যখন বৃদ্ধ মা-বাবা জানতে পারেন তাদের ভুল বুঝিয়ে দুই ছেলে সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন, তখন সম্পত্তি ফিরে চাওয়ায় বাক-বিতণ্ডার জের ধরে তাদেরকে মারধর করে ওই দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী। ২০১৯ সালের মে মাসের ওই ঘটনায় মিরজান বেগম একই বছরের ২৪ জুন মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন।

বৃদ্ধা মিরজান নেছা জানান, তার মেয়ের ঘরের নাতিরা তাকে আশ্রয় দেয়ায় ওই দুই ছেলে তার নাতিদের বিরুদ্ধে আদালতে চারটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

এ সময় আদালতের বারান্দায় কাঁদতে কাঁদতে মিরজান নেছা বলেন, ‘আল্লাহ তুমি আমাকে পবিত্রভাবে দুনিয়া থেকে নিয়ে যাও।’


আরো সংবাদ



premium cement