২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হত্যা নাকি আত্মহত্যা?

হত্যা নাকি আত্মহত্যা? - ছবি : প্রতীকী

হত্যা নাকি আত্মহত্যা একটি মেয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে কেন থাকতে পারল না? আত্মহত্যার সুরতহালের রিপোর্ট কেন মামলার সাথে পাওয়া গেলো না। কেন আমাদের তথ্য মতো থানায় মামলা নিলো না, এমন অভিযোগ নিহত খাদিজা আক্তারের বাবা নুর মোহাম্মদের। তার দাবি, খাদিজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। থানায় হত্যা মামলা না নিয়ে নিয়েছে একটি আত্মহত্যা মামলা। ঘটনাটি ঘটেছিল ১২ ডিসেম্বরের বিকেল ৩টার দিকে। নিহতের বাবা হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে একটি আত্মহত্যা মামলা দায়ের করে।

মেয়ের ভাই মোবারক হোসেনের দাবি, ‘খাদিজার ভাসুর বাবু (৫৫), তার ছেলে নাহিদ (২৩) শাশুড়ি আছিয়া বেগম, শ্বশুর জসিম উদ্দিন মিলে তার বোনকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। পরে এ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। তাদের বিদেশী টাকার কাছে পুলিশ প্রশাসনও আমাদের কাছ থেকে নেয়া জবানবন্দি গ্রহণ না করে তাদের ইচ্ছামত আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার বানিয়াল মহেশপুরের নুর মোহাম্মদ বেপারীর মেয়ে খাদিজা বেগমের (২৩) সাথে সাত বছর আগে বিয়ে হয় চরডুমুরিয়ার মো: জসিম উদ্দিনের ছেলে আলামিন মোল্লার (৩২)। আয়ান নামের (৪) একটি ছেলে রয়েছে খাদিজা আলামিন দম্পতির।

খাদিজা বেগমের বাবা নুর মোহাম্মদ বেপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে আমাদের কোনো কথা আমলে না নিয়ে, তাদের মনগড়া একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলার সব তথ্য মিথ্যা।

খাদিজা বেগমের খালা খোদেজা বেগম (৪০) জানান, ‘আমার ভাগনীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর সময় আমার ভাগনীর পা সম্পূর্ণ মাটিতেই ছিল। একটা ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস অপর একটি ওড়না গলায় জড়ানো ছিল। বাবু, তার ছেলে নাহিদ ও বাবুর মা তাকে (খাদিজা) হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। পরে এ ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছে।’

নুর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, ‘আমার মেয়ে খাদিজা বেগমের (২৩) স্বামী আল আমিন ইরাক প্রবাসী। আমার মেয়ে ও নাতি আয়ানকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছিল। শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে মেয়ের জামাইয়ের বনি-বনা না হওয়ায় রবিউল্লাহ রীনা দম্পতির বাড়ির দোচালা টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। তার পরেও ভাসুর বাবুর অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি খাদিজা। শেষ পর্যন্ত ভাড়া বাসাতেই লাশ হতে হয়েছে খাদিজাকে।’

নুর মোহাম্মদ মোল্লা আরো জানান, “আমার মেয়ের জামাই আল আমিনের কথামতো ভাড়া বাসায় যাওয়ার পর মেয়ের ভাসুর বাবু আল আমিনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর বউকে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিমু দেখি তুই কী করস।’ আল আমিনের কাছ থেকে খাদিজার ভাসুর বাবু নিয়মিত টাকা নিতো। টাকা না দিলেই আমার মেয়ের উপর অত্যাচার চালাত।”

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে আমাদেরকে জানালো না। আমরা লাশও নামাইনি। তড়িঘড়ি করে লাশ হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য তারাই নিয়ে গেছে। আমরা থানায় যেতে না যেতেই থানায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) কল্পনা, বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান সোরাব পীর, আধারা ইউপি চেয়ারম্যান কবির মাস্টার, জাজিরার আমির হোসেন গাজী, সাবেক চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আফসু, ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন উপস্থিত হয়ে যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: আবু শহীদ আমাদের থেকে যে বয়ান নেন তার কিছুই মামলায় লিপিবদ্ধ করেননি। তারা একটি অপমৃত্যু মামলা করে হত্যা ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়েছে।’

আত্মহত্যা মামলাটি এমনভাবে করা হয়েছে যার মধ্যে কোনো কিছু ফাঁক ফোকর রাখা হয়নি। নিহতের বাবার অভিযোগ, এমন সুনির্দিষ্ট আত্মহত্যার অভিযোগ দেয়া হয়েছে যেখানে হত্যা করা হতে পারে বলেও কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কীভাবে এতটা স্পষ্টভাবে একটি আত্মহত্যার মামলা লিখতে পারে যে, আমার মেয়ে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের আড়ার সাথে আত্মহত্যা করেছে। অথচ ওই বাবারই বক্তব্য হলো তার মেয়েকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করে আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।

এ বিষয়ে সোরাব পীর বলেন, ‘মেয়ের বাবা আমার সাথে এমন বক্তব্য দেয়নি। পুলিশের কাছে দিয়েছে কিনা জানি না। তবে মেয়ের বাবা বলেছিল ময়নাতদন্ত না করলে আমি আপস হয়ে যাবো। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর করার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: আবু শহীদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকে। হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে প্রথম দিকেই জানা যায়। তার পরেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement