১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদ্মার পানি সামান্য কমলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না বন্যার্তরা

পদ্মার পানি সামান্য কমলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না বন্যার্তরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি সামন্য কমলেও ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা মানুষজন এখনো নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।

পদ্মার পানি কমলেও সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তা এখনো বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ঘরবাড়ি ছাড়ে আসা বানভাসীরা উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক মাস ধরে পরিবার-পরিজন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিসহ আশ্রয় নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন। বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়া বন্যার্তরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সঙ্কটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউবা বাড়িতেই মাচা করে অবস্থান করছেন। সেখানে রয়েছে গো-খাদ্যেরও সঙ্কট। বাঁধের পাশে সারিবদ্ধভাবে গরু-ছাগল বেঁধে রেখেছেন বন্যার্তরা। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকাসহ ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘেরসহ রাস্তাঘাট।

জেলার সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী এবং পাংশা উপজেলার- মিজানপুর, বরাট খানগঞ্জ, চন্দনী, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া, ছোটভাকলা, রতনদিয়া, কালিকাপুর, হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর এই ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় প্লাবিত ও পানিবন্ধি রয়েছেন।

এসব এলাকার গ্রামগুলো এখন পুরোপুরি বানের পানিতে ভাসছে। এখানে বসবাসরত মানুষ কোনোরকমে দিনযাপন করছেন খেয়ে না খেয়ে। ঘরে নেই খাবার, নেই রান্না করার চুলা, ফসলী মাঠ ভাসছে এখন বানের পানিতে। নষ্ট হচ্ছে ঘর-বাড়ি, ধান-পাট সবজিসহ সব ধরনের ফসল। সবদিক থেকেই বানভাসি চরাঞ্চলের এসব মানুষ এখন নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। বানভাসি এসব মানুষদের বিভিন্ন বাঁধে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে খাদ্য সঙ্কটে পড়ে এখন সরকারি ত্রাণের আশায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন দেখলে কাকুতি-মিনতি করছেন।

রাজবাড়ী কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় জেলার ৩ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও রোপা আমন, পাট, আউশ ধান ও শাক-সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।

সাড়ে ৪ মাস যাবৎ করোনাভাইরাসের কারণে গোটা জেলায় বেকারত্ব বেড়েছে। তার উপর তিন দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যাদুর্গত এলাকায় কর্মহীন মানুষগুলো চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন।

গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কট, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা তুলনায় একেবারে কম হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এক মাস ধরে বন্যার পানি আটকে থাকায় উপদ্রুত এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের লোকজন চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যেসব পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পানিতে এখনো ঘর তলিয়ে থাকায় তারা বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রিত এসব বন্যার্তরা প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ২৪ মেট্রিক টন চাল ও ২৫ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ জেলার বন্যার্তদের অতিব প্রাপ্য তিন হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করছে ঘরে ঘরে গিয়ে।

রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্বা ফকির আব্দুল জব্বার ও জেলা পরিষদের অন্যতম সদস্য নাজমুল হাসান মিন্টু রাজবাড়ী সদরের পদ্মার চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে গিয়ে এই ত্রাণ বিতরণ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement