২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হচ্ছে সাহেবেরচর গ্রাম

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে সাহেবেরচর গ্রাম - ছবি : নয়া দিগন্ত

ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙ্গনে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামটি বর্তমানে বিলীন হতে চলেছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে মসজিদ, স্কুল, মাজার, গাছপালা ও ফসলি জমি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাহেবেরচর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েও কাজ শুরু না করায় ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হয় জুন মাসের ২৫ জুন। ফলে নদের পানি বাড়ার সাথে সাথে বিলীন হচ্ছে উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামের বসত ভিটা, বাড়ি-ঘর ও উর্বর চার ফসলী জমি। গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার।

হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম জাহিদুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওয়াহিদুজ্জামান সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পেয়ে রোববার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে জরুরি প্রতিকার চেয়েছেন।

চুক্তি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ ছিল ২০২০ সনের ২৫ জুন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনায় এখনও কাজ শুরু হয়নি।

সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে নদীপাড়ে কথা হয় সিদলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজ উদ্দিন, মেম্বার লিটন মিয়া, সাহেবেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলামসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের বাম দিকের অংশ ভাঙনের কারণে গ্রামের তিন কিলোমিটার একাধিকবার ভাঙ্গনে অনেকেই বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পতি হারিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে সাহেবেরচর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দু’বার ভাঙ্গনের কবলে নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ৩০ বছরের ভাঙ্গনের কারণে নদের গর্ভে বিলীন হয়ে অনেক পরিবার আজ নি:স্ব।

এ গ্রামের রতন মিয়া, মঞ্জিল মিয়া, আঃ করিম রাস্তার উপর বাড়ি তৈরি করে বসবাস করে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। এছাড়া নুর ইসলাম, আবুল কালাম হাদীসহ অনেকেই এ অঞ্চল ছেড়ে নদের ওপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন।

ভাঙ্গনের কারণে গ্রামটি অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। নদের ভাঙ্গনের কবল থেকে গ্রামবাসীকে ও চার ফসলি উর্বর জমি রক্ষা করতে পরলোকগত এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে সাহেবেরচর গ্রামের পশ্চিম দিকের হাজিবাড়ি থেকে পূর্ব দিকের অংশ ও ভাটিপাড়া পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ মিটার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধের অনুমোদন হয় বিগত বছর। এত দিনে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় ৬৮০ মিটার বাদ দিয়ে দরপত্র আহ্বান হলেও সে কাজ শেষ করার কথা ছিল এ বছরের ২৫ জুন মধ্যে। যা এখনো শুরুই হয়নি। ফলে গ্রামটি বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, প্রকল্পটি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে, যেহেতু এটি একটি প্যাকেজের আওতায় রয়েছে, যে জন্য প্রকল্পের সার্বিক দিক বিবেচনায় ১৫ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির মিটিং শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম জাহিদুর রহমান জানান, তিনি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছেন। শুরুতেই তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন যাতে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিরক্ষা বাধঁ নির্মাণ করা যায়। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল জানান, তিনিও এলাকাটি পরিদর্শন করে ভাঙ্গন কবলিতদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement