১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় লকডাউন সোনা মিয়ার ঝুড়ি কেউ কেনে না

করোনায় লকডাউন সোনা মিয়ার ঝুড়ি কেউ কেনে না - নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে এক বৃদ্ধকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখা যায়। ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম সোনা মিয়া। শনিবার সকালে তার দেখা মিলল উপজেলার পূর্ব ছনকা গ্রামে। প্রতিদিনের মতো বাসায় দা আর বটি হাতে নিয়ে বসে আছেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে লোকজন বাঁশের ঝুড়ি না কেনায় অনাহারে দিন কাটছে বৃদ্ধ সোনা মিয়ার।

বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া ক্রেতাদের ডেকে বলছেন বাবাজি, ঝুড়ি কিনে নিয়ে যান। এই সময়ের মধ্যে ৮০-৯০ টাকা উপার্জন হয়েছে। সোনা মিয়ার চেয়ে অনেক কম বয়সী ব্যক্তিরা বসে আছেন ভিক্ষার থলে নিয়ে। অথচ ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ বেছে নিয়েছেন বাঁশের ঝুড়ি তৈরির পেশা।

বৃদ্ধ বয়সে এমন পেশা বেছে নেয়ার গল্প জানালেন সোনা মিয়া। তার বাড়ি সাটুরিয়ার বরাইদের চরে। সোনা মিয়ার ঘরে তিন ছেলে। সবাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে যার যার মত আলাদা থাকে। খোঁজ রাখেনা কেউ বৃদ্ধ বাবাটার। সময় পেরিয়ে ছেলে নাজিমুদ্দিনের ঘরেও এখন দুই সন্তান। বর্তমানে রবিউল ইসলাম নামের ছয় বছরের পিতৃহারা এক নাতিকে মানুষ করছেন তিনি।

এদিকে বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় সোনা মিয়া রাতের আশ্রয় ছনকা এলাকার একটি জরাজীর্ণ ঘরে। বৃদ্ধ বয়স হলেও মাত্র কয়েকদিন আগে এখন জোটেছে বয়স্ক ভাতা। এজন্যই এই বয়সে বেছে নিয়েছেন বাঁশ ও বেতের পেশা।
সোনা মিয়া বলেন, আমার এই বয়সে অন্য কোনো কাজ করার শক্তি নেই। তাই ৫শ’ টাকা দিয়ে বাঁশ কাটার দা আর বটি কিনেছি। প্রতিদিন দুই আড়াই শ’ টাকা উপার্জন করি। দুই বেলা খাবার খাই। এতে এক শ’ টাকা লেগে যায়। বাকি এক-দেড় শ’ টাকা ভবিষ্যতের জন্য প্রতিদিন জমা রাখি। রাত হলেই আশ্রই নেই জীর্ণ ঘরে। করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

এই বাঁশ আর বেত কোথা থেকে আনা হয়, জানতে চাইলে সোনা মিয়া বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে আমরা বাঁশ কিনি। প্রতিটি বাঁশের দাম ১৮০ থেকে থেকে ২০০ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে ৫-৬ টি ঝুড়ি তৈরি করা যায়। ঝুড়ি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। ক্রেতারা বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যায়।
১নং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, দেরিতে হলেও সোনা মিয়াকে বয়স্ক ভাতা করে দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement