১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা আতঙ্ক : রোগীশুন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল

রোগীশুন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল - ছবি: নয়া দিগন্ত

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এখন সর্বত্র। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। কার্যত লকডাইনে রয়েছে পুরোদেশ। বিভিন্ন হাসপাতালেও করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য জটিল কোনো সমস্য না হলে এখন কেউ আর হাসপাতালে আসছেন না। হাসপাতালে ভর্তিতেও আগ্রহ কম রোগীদের। করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেকটা রোগীশুন্য হয়ে পড়েছে ২৫০ শয্যবিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল।

বুধবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর কোনো চাপ নেই। রোগীর স্বজনদের নেই কোনো ভিড়। অলস সময় পার করছেন হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ অন্যরা। বর্তমানে এই হাসপাতালের চিত্র অন্য যেকোনো সময়ের বিপরীত। অথচ অন্য সময় রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় ঠেলে হাসপাতালে প্রবেশ করাই মুশকিল হয়ে যায়।

জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো রোগী নেই। অলস বসে আছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স নূরুল ইসলাম। পাশে আরেকজন নার্স। দু’জনে বসে কী যেন আলাপ করছিলেন। সেখানে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই কী করব। রোগী নেই। তাই বসে থেকে অলস সময় পার করছি। যেকোনো সময় তো রোগী চলে আসতে পারে। তখনতো তাদের সেবা দিতে হবে। এজন্য আমরা আমাদের মত প্রস্তুত আছি।’

এ সময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. সাজিয়া আফরিন। তিনিও বসা ছিলেন তার কক্ষে নির্দিষ্ট চেয়ারে। মাঝে মাঝে দু’একজন করে রোগী আসছেন। তিনি প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, রোগী খুবই কম আসছেন। অলস বসে থাকতে হয়। তবে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি রোগীদের সবরকম সেবা দেয়া জন্য।

তিনি বলেন, খুব বেশি সমস্যা না হলে এখন আর কেউ হাসপাতালে আসেন না। রোগীর চাপ এখন অনেক কম। এখন শুধু অ্যাক্সিডেন্ট, মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতজনিত সমস্যা, পেট ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। তাদের মধ্যে যাদের চিকিৎসা বাসায় চলতে পারে, আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাদের ছেড়ে দিচ্ছি। তাছাড়া হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রেও  রোগীদের এখন আগ্রহ কম। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

হাসপাতালের তিন তলায় ৭নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন রোগী ছাড়া পুরো ওয়ার্ডই ফাঁকা পড়ে আছে। এই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ছালমা আক্তার বলেন, এই ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৬টি। বর্তমানে রোগী আছে মাত্র পাঁচজন। অথচ অন্য সময় এখানে রোগী থাকে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন। এখন যেসব রোগী আসছেন আমরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

এই ওয়ার্ডে বুধবার (১ এপ্রিল) সকালে হনুফা বেগম নামে এক রোগী ভর্তি হন। তিনি শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় থাকেন। মঙ্গলবার রাতে বাসায় কাজ করার সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তিনি বলেন, খুব সমস্যা না হইলে হাসপাতালে আসতাম না। হাসপাতালে ভর্তির পর এখন অনেকটাই ভালো লাগছে। তবে এই অবস্থায় হাসপাতালে থাকার ইচ্ছা নাই। সুযোগ থাকলে বাসায় চলে যাব। হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডগুলোতে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আর.এম.ও ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এটি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও অন্য সময় প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ জন রোগী থাকে। অথচ সব ওয়ার্ড মিলে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকে ১৫০ থেকে ১৮০ জন। এখন শুধু এক্সিডেন্ট, মারামারি, পেট ব্যাথা ও স্ট্রোকের রোগীরাই বেশি আসছেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। আগে ছিল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এই সময়ে প্রতিদিন রোগী আসত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার। এখন সময় কমিয়ে সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন রোগী আসে ১৮০ থেকে ২০০ জন।

করোনা রোগীদের জন্য বিশেষ ইউনিট সম্পর্কে ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখানে ৮০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষ ইউনিট খোলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী এখানে আসেননি।


আরো সংবাদ



premium cement