১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশে প্রথম : প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফিরছেন করোনামুক্ত প্রবাসীরা

গাজীপুরের ‘মেঘডুবি মা ও শিশু কল্যাণ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র’ - নয়া দিগন্ত

করোনাভাইরাস দেহে না থাকায় ইতালিফেরত ৩৬ জন প্রবাসী সোমবার গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে সুস্থ্য হয়ে ১৬ দিন পর তারা বাড়ি ফিরছেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ইতালিফেরত ৪৪ জন বাংলাদেশী প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে আটজনের দেহে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তাদেরকে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দু’দফায় (১৫ মার্চ ৪ জন ও ১৬ মার্চ ৪ জন) রাজধানী উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অধিকতর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই ৮ জনের মধ্যে একজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আইসোলেশনে এবং অপর ৭ জনকে ঢাকা থেকে পুনরায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরে কাপাসিয়ার পাবুর ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। এ কেন্দ্রে আরো দুজনসহ মোট ৯ জন বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব ব্যক্তির নিয়মিত খাবার, ফল ও স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যেহেতু গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আনা অন্যদের সংস্পর্শে ছিলেন। তাই এ হাসপাতালে অবস্থানরত বাকি ৩৬ জনকে দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এসময় এখানে তাদেরকে করোনা ভাইরাসবিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শ ও সেবা দেয়া হয়। মেঘডুবির ওই কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে ১৬ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে ইতালিফেরত ওই ৩৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাই সোমবার সকালে গাজীপুরের মেঘডুবি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ইতালিফেরত ওই ৩৬ জনকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিদায় দেয়ার পর এ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রটিকে আরো প্রস্তুত রাখা হবে। তবে কাপাসিয়ার পাবুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে থাকা অপর ৯ জন আরো কিছু দিন সেখানে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এ ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কিছু করার নেই।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে রোববার পর্যন্ত জেলায় মোট ১৪৯৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৪৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে (আইসোলেশনে ১ জন) রাখা হয়। এদের মধ্যে ৫৫৮ জন ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ছাড় পেয়েছেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের মেঘডুবি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে ইতালিফেরত ওই ৩৬ জনকে ছাড় দিয়ে তাদের সোমবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফেরার এটিই প্রথম ঘটনা।

তিনি আরো জানান, বিশ্ব ব্যাপী করোনাভাইরাস যখন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ঠিক তখনই করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গাজীপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কোয়ারেন্টাইনের জন্য গাজীপুরে মেঘডুবি ও পাবুরের ওই দুস্থ্ কেন্দ্র ছাড়াও পূবাইল এলাকার ম্যাটসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় ১০/১৫টি করে বেড সম্মিলিত ইনস্টিটিউশন ফিক্সড করা হয়েছে। যদি আরো লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়, তাহলে সেগুলোতে আমরা কোয়ারেন্টাইন করবো। প্রতিটি উপজেলায় যেসব ক্লিনিকগুলো রয়েছে সেখানে ৩/৪টি বেড সমৃদ্ধ একেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালেও আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে আইসোলেশন কর্ণারও খোলা হয়েছে। যেখানে সন্দেহভাজন রোগীরা যাবেন। যাদের ঠাণ্ডা কাশি, জ্বর আছে তারা সেখানে আলাদাভাবে যাবে। এভাবে আমাদের কোয়ারেন্টাইনের সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে।



 


আরো সংবাদ



premium cement