২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শ্রীপুরে ব্যবসায়ীকে গলা কেটে খুন : চতুর্থ স্ত্রী ও শ্বশুর গ্রেফতার

গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত নিহতের স্ত্রী ও শ^শুর এবং নিহতের ছবি (ফাইল ছবি)। - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যবসায়ীর এসিডে ঝলসানো গলাকাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের চতুর্থ স্ত্রী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১’র সদস্যরা।

বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃত স্ত্রী স্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানি পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন।

আটককৃতরা হলেন- শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া এলাকার নিহত আব্দুর রহমানের (৪৫) চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার (২৬) ও সামিরার বাবা বরিশাল জেলার উজিরপুর এলাকার মৃত ফজলুল হকের ছেলে মো: আলী হোসেন (৫৫)।

র‌্যাব-১’র কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকার মজনু মিয়ার তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান তার চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার ও শাশুড়ি মালতি বেগমকে সাথে নিয়ে বসবাস করে আসছিল।

পঁচা দুর্গন্ধের সূত্রধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তালাবদ্ধ ওই বাসা থেকে আব্দুর রহমানের গলাকাটা ও ঝলসানো অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি চটের বস্তায় ভর্তি করে বিছানার চাদর ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল।

ঘটনার পর থেকে সামিরা ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক থাকে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার চাচার বাসা থেকে র‌্যাব-১’র সদস্যরা ওই হত্যা মামলার আসামি সামিরা আক্তারকে গ্রেফতার করে। এসময় পলায়নে সহায়তা করায় সামিরার বাবা আলী হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সামিরা উক্ত খুনের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয়।

গ্রেফতারকৃত সামিরা আক্তার র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মর্মান্তিক এ হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে আব্দুর রহমান তার স্ত্রী সামিরাকে ব্যবসায়িক পার্টনার রতন মিয়ার সাথে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনকাজে লিপ্ত করেন। পরে রতন রাত ১১টায় বাসা থেকে চলে যান। এঘটনায় স্বামীর উপর ক্ষুব্ধ হন সামিরা। এর জের ধরে ভোর রাত ৩টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা লম্পট স্বামী আব্দুর রহমানকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার স্ত্রী সামিরা। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ বিকৃত করার জন্য এসিড দিয়ে নিহতের মুখ ঝলসে দেয়। পরে নিহতের লাশ চটের বস্তায় ভরে বিছানার চাদর ও তোষক দিয়ে পেঁচিয়ে রাখেন।

ঘটনার পর লাশ সরিয়ে ফেরার জন্য সামিরা তিনদিন ওই বাসায় অবস্থান করেন। লাশ সরাতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহযোগিতায় সামিরা বাসা থেকে পালিয়ে যান। সামিরা সেখান থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন করে থাকেন। পরে সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ জেলায় মামার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) মামার বাসা থেকে ঢাকার দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার তার চাচার বাসায় এসে আত্মগোপন করে থাকেন সামিরা। সোমবার রাতে এ বাসা থেকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করেন।

সামিরা আরো জানায়, টঙ্গীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন আব্দুর রহমান। সামিরা ২০১৬ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং তার সাথে পূর্বপরিচিত ছিলেন। সেই সুবাদে ভিকটিম আব্দুর রহমানের টঙ্গীর বাসায় থেকে সামিরা ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশ নেন। এ সুযোগে ভিকটিম তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে কৌশলে আব্দুর রহমান তার টঙ্গীর বাসায় সামিরাকে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। এতে অচেতন হয়ে পরলে সামিরাকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন আব্দুর রহমান। পরবর্তীতে হত্যা এবং ধর্ষণের ওই ভিডিও চিত্র প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আব্দুর রহমান দিনের পর দিন সামিরাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরাকে তার প্রথম স্বামী ডিভোর্স দেন।

এরপর থেকে সামিরা শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামিরাকে আব্দুর রহমান বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। বিয়ের পর থেকে আব্দুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তার ব্যবসায়িক পার্টনারদের সাথে স্ত্রী সামিরাকে যৌনকাজে বাধ্য করতেন। সামিরা এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামী আব্দুর রহমানের কাছে ডিভোর্স চান। কিন্তু আব্দুর রহমান এতে রাজী না হয়ে স্ত্রী সামিরাসহ তার মা-বাবা ও ভাইকে খুন করার হুমকি দেন।

ঘটনার দিন পর্যন্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০) সামিরাকে এ ধরনের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। এতে স্বামীর উপর ক্ষুব্ধ হয় তিনি। এর জেরে স্বামী আব্দুর রহমানের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাকে খুন করতে বাধ্য হন স্ত্রী সামিরা।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement