২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপী লোকজ উৎসবের উদ্বোধন

সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপী লোকজ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী - নয়া দিগন্ত

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, শিল্পাচার্যের ২শ’টির বেশি শিল্পকর্ম বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পচার্যকে স্মরণ করার জন্য তার এ সৃষ্টি সোনারগাঁওয়ের এ প্রতিষ্ঠান যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বর্তমান সরকারের এ মেয়াদেই সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশেন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। যেখানে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি ও লোকজন উৎসবের মিশ্রণ থাকবে।

মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে সোনারতরী মঞ্চে অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী লোকজ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন এবং পুনরুজ্জীবনের লক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করেছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সোনারগাঁও ইতিমধ্যে জামদানীতে বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি সোনারগাঁওয়ের অর্জন। এটি কেউ এমনি এমনি দান করে দেননি। সোনারগাঁওয়ে এখন জামদানী তৈরি হয়। এক সময় মসলিন তৈরি হতো। কাপাসিয়া থেকে মুসলিনের তুলা ও সুতা স্থানান্তর হয়েছিল। বুড়িগঙ্গা পাড়ে শীতলক্ষ্যা মেঘনা ব্যষ্টিত এ বদে যে তাপমাত্রা ছিল মসলিন বুনতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী ছিল। তাই এখানে মুসলিন পল্লী গড়ে উঠেছিল।

মন্ত্রী আরো বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনকে বেশি করে তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকার তার জন্মস্থান ময়মনসিংহে সংগ্রহ শালার জন্য ২৩৪ কোটি টাকার ব্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ব্রক্ষপুত্রের সংযোগ হবে মেঘনা নদী দিয়ে। ফলে ময়মনসিংহের সাথে সোনারগাঁওয়ের সংযোগ হবে। আমরা চাইবো এ সংযোগটি যেন সোনারগাঁওকে প্রসারিত ও বিকশিত করে। সোনারগাঁও থেকে আলো নিয়ে সোনা ছড়াবে ময়মনসিংহে। মন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং জীবন্ত প্রদর্শনী ও লাঠি খেলা উপভোগ করেন।

ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসীমউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল আলম, সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রকিবুর রহমান খাঁন, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণি প্রমুখ।

ফাউন্ডেশন সূূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৩২টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁও ও মা-রার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের তালপাখা ও নক্শি পাখা, রংপুরের শত রঞ্জি, সোনারগাঁওয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারু শিল্প, নক্শিকাঁথা, বেত ও বাঁশের কারুশিল্প, নক্শি হাতপাখা, সিলেট ও মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁওয়ের পাটের কারু শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোস শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পসহ মোট ১৫৪টি স্টল থাকছে। এছাড়াও প্রতিদিন লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজউৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সোনারতরী মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী শফি মন্ডল, নওরিনসহ বিভিন্ন শিল্পীরা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল