২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এক মাসে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারাল ডিএসই

-

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন হারিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ এক মাসে ডিএসইর মোট কর্মদিবস ছিল ২১টি। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে দেশের শীর্ষ পুঁজিবাজারটি।। মোট ২১টি কর্মদিবসের মধ্যে ৬ দিন বাজার সূচকের নামমাত্র উন্নতি ঘটলেও বাকি ১৫ দিনই পতন ঘটে সূচকের। ধারাবাহিক এ পতন অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহের শেষদিন পর্যন্ত।

গত ২০ আগস্ট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, যা গত ১৯ সেপ্টেম্বর দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকায়। একই সময় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারায় ৩৭২ পয়েন্ট। ২০ আগস্ট সূচকটি অবস্থান করছিল ৫ হাজার ২২৭ পয়েন্টে। একই সময় গত ১৯ সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৪ হাজার ৮৫৫ পয়েন্টে। অনুরূপভাবে দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ নেমে এসেছে গত কয়েক বছরের সর্বনি¤েœ।

ধারাবাহিক পতন রোধে পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেয়া নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও বাজার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, বরং সভা-পরবর্তী তিনটি কর্মদিবসের প্রতিটিতেই পতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহতই থাকে।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের জানুয়ারির শেষদিকেই পুঁজিবাজারের পতন শুরু হয়। অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছুটা রক্ষণশীল সিদ্ধান্তের পর থেকেই এ পতন শুরু। ২৪ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে। গত বৃহস্পতিবার সূচকটি নেমে আসে ৪ হাজার ৮৫৫ পয়েন্টে। সে হিসাবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিগত আট মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক হারায় ১ হাজার ৯৫ পয়েন্ট। এভাবেই হারিয়ে যায় ডিএসইর বাজার মূলধনের একটি বড় অংশ।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বাজারের ধারাবাহিক এ পতনের কারণ হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নানা অসঙ্গতির পাশাপাশি বাজারে ভালো শেয়ারের জোগানের অভাবকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, এ মুহূর্তে পুঁজিবাজার অনেকটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্ভর। কিন্তু এ দু’টি খাতই নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে সঙ্কটে। সঙ্কট চলছে তারল্যের। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মধ্যেও নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে যা প্রতিনিয়তই বাজারকে বিক্রয়চাপের মুখে ফেলছে। প্রতিনিয়তই দরপতনের শিকার হচ্ছে সবগুলো খাত। ফলে বর্তমানে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ অবস্থানে চলে যায় বাজারটির মূল্য-আয় অনুপাত (পিই)। ২০১৪ সালের পর ডিএসইর গড় পিই আর এত নিচে নামেনি। বাজারের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারও এ সময় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ মূল্যস্তরে। অপর দিকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজারের এ মূল্যস্তরকে খুবই উপযোগী মনে হলেও প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসছে না ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।

চরম আস্থাহীনতা স্বীকার পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এ মুহূর্তে বাজারের স্থিতিশীলতায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বাজারবান্ধব সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন। তারা মনে করেন, যেভাবে প্রতিনিয়ত সূচক হারাচ্ছে এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে তৃতীয়বারের মতো বিপর্যয়ের মুখে পড়বে পুঁজিবাজার। তখন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটবে। অতীতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যেভাবে পার পাওয়া গেছে এবার তা সম্ভব হবে না। তাই দেরিতে হলেও পরিস্থিতি উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

অপর দিকে তারল্য সঙ্কটের পাশাপাশি পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যকার সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বকেও অনেকে বাজারের ধারাবাহিক পতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তারা মনে করেন, লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে দু’টি সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা না হলে পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি সম্ভব নয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়কেও জরুরি মনে করেন তারা। এর মাধ্যমে বাজারের চলমান অস্থিরতা দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement