১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিউজিল্যান্ড হত্যাকাণ্ড : বাবা ডাক শুনতে পারলেন না পরিবারের হাল ধরা ওমর ফারুক

নিউজিল্যান্ড হত্যাকাণ্ড : বাবা ডাক শুনতে পারলেন না পরিবারের হাল ধরা ওমর ফারুক - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাবা ডাক শুনতে পারলেন না বন্দরের ওমর ফারুক। অনাগত সন্তানের মূখ না দেখেই পাড়ি জমালেন পরপারে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় মারা যায় ওমর ফারুক। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে বন্দরে ওমর ফারুকের বাড়িতে।

জানা যায়,অসময়ে বাবার মৃত্যুতে পরিবারের হাল ধরেছিল ওমর ফারুক। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি জমান সুদূর নিউজিল্যান্ডে। ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন হয়। নাগরিকত্ব পেয়ে যান সেখানে। দেশে এসে ধুমধাম করে বিয়ে করেন। আবার ফিরে যান চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারি। কিন্তু প্রবাসে থাকলেও তার মনটা পড়ে ছিল পরিবারের কাছে। সময় পেলেই মা-বোন ও স্ত্রীর খোঁজ নিতেন।
স্ত্রীকে সতর্ক করতেন যেন সাবধানে থাকে। অনাগত সন্তান যেন মাতৃগর্ভে নিরাপদে থাকে। নানা চিন্তা। স্ত্রী সানজিদা জাহান নেহার সঙ্গে আগত সন্তানকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখতেন ফারুক।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটেও স্ত্রী নেহার সঙ্গে কথা বলেন ওমর ফারুক। স্ত্রীর খোঁজ নিয়ে তাকে সাবধানে চলাফেরা এবং নিজের প্রতি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে অসুস্থ মায়ের যত্ন নিতে ও ছোট বোনকে দেখে রাখার কথা বলেন। কিন্তু কে জানতো এটাই ফারুকের সঙ্গে নেহার শেষ কথা হবে। তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন দুঃসংবাদ দরজায় কড়া নাড়ছে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ওমর ফারুক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহতের পরিবার।
ওমর ফারুকের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফারুকের মা রহিমা খাতুন পাগলপ্রায়। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। অনেকটা বাকরুদ্ধ ওমর ফারুকের তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সানজিদা জাহান নেহা। তার অনাগত সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই পিতৃহারা হলো। আত্মীয়-স্বজনরা সান্ত্বনা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে আহাজারি ছাপিয়ে এখন অপেক্ষা ওমর ফারুকের লাশ কবে কখন দেশে আসবে।

নিহত ফারুকের পারিবারিক তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জের বন্দরের রাজবাড়ি এলাকার মৃত আবদুর রহমানের ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে ওমর ফারুক (৩৫) তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন এখনো অবিবাহিত। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে যান ওমর ফারুক। সেই দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর ছুটিতে দেশে এসে ২০১৭ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সানজিদা জামান নেহাকে বিয়ে করেন ফারুক। এরপর সবশেষ গত বছরের ১৬ নভেম্বর দেশে এসে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড যান ফারুক।

ফারুকের স্ত্রী সানজিদা জামান নেহা বলেন, সর্বশেষ বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত এবং নিউজিল্যান্ড সময় সকাল ৮টায় ফারুক তাকে ফোন করে তার ও পরিবার সদস্যদের খোঁজখবর নেন। সেই সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিজের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার কথা বলেন। এটাই ছিল ফারুকের সঙ্গে নেহার শেষ কথোপকথন।

তিনি জানান, টেলিভিশনে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের পর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক হতাহতের খবর পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি। এবং সেখানে ফোন করে ওমর ফারুকের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করি। তার রুম মেটের কাছ থেকে জানতে পারি লাঞ্চ ব্রেকের পর ফারুক মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যায়। এরপর কি হয়েছে তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি সে।

পরে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কনসুলারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওমর ফারুক আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে। শনিবার সন্ধায় জানতে পারে ওমর ফারুক মারা গেছেন।
শনিবার রাতে নিউজিল্যান্ডে যোগাযোগ করে লাশ শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতির বড় ভাই মোশারফ হোসেন।
ওমর ফারুকের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে আনাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন পরিবারের স্বজনরা। তাদের দাবি, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটিকে হারিয়ে সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement