কিশোরীদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা : দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
কিশোরীদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা : দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বিখ্যাত গান ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে, কেমন দেখা যায়, ওরে ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ুর পংক্ষি নাও’। এমন মনকাড়া গানের সুরে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সাচনাবাজার ইউনিযনের ছনোয়ার হাওরে হয়ে গেল গ্রাম বাংলার কিশোরীদের ঐতিহ্যবাহী ও ব্যাতিক্রমী নৌকা বাইচ। কিশোরীরা মাঝি-মাল্লা সেজে ‘মারো টান হেইয়ো, বাইয়ো হেইয়ো'- এসব আওয়াজ করছে আর হাজার হাজার দর্শক আনন্দ উচ্ছাসে মাতছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কেয়ার বাংলাদেশ এর অর্থায়ানে জৈন্তা ছিন্নমুল সংস্থার (জেছিস) আয়োজনে কিশোরীদের ব্যতিক্রমী এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে সকাল থেকেই ছনোয়ার হাওর পাড় সাচনা বাজার সিএনবি রোডে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও হাজার-হাজার দর্শকরা জমায়েত হন। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আল-ইমরান, সাচনাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর করিম শামীম জেসিস পিডি বদরুল ইসলামের নেতৃত্বে কিশোরীদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘কন্যা শিশুর জাগরণ, আনবে দেশে উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের সহযোগীতায় জেছিস টিপিং পয়েন্ট প্রকল্প কিশোরীদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জামালগঞ্জ সদর, সাচনা বাজার, বেহেলী ও জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিযনের জেছিস এর টিপিং পয়েন্ট প্রকল্পের কিশোরীরা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। নৌকা বাইচের শুরুতে হাজারো দর্শক করতালির মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে যান। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই ব্যাতিক্রমী প্রতিযোগিতা। এতে জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন প্রথম ও সাচনাবাজার ইউনিয়ন রানার্স আপ হয়।
পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা আক্তার দীপু, থানার অফিসার ইন-চার্জ মো: আবুল হাশেম, জেসিসের নির্বাহী পরিচালক এটিএম বদরুল ইসলাম, উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: রজব আলী, উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম.নবী হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, একসময় নৌকা বাইচ ছিল গ্রাম বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব। কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামীণ ঐতিহ্য সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছে। মূলত আগামী প্রজন্মকে গ্রামীণ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানান দিতেই ব্যাতিক্রমী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুরুষের পাশা-পাশি নারীরাও দেশের উন্নয়নে যে কোনো কাজে অংশগ্রহণ করে দেশ সেবায় এগিয়ে যাচ্ছেন, কিশোরীদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এটাও একটি উদাহরণ। পরে উত্তর ইউনিয়নের কিশোরী ও চেয়ারম্যানের হাতে প্রথম স্থান অধিকারীর ট্রপি ও সাচনাবাজার ইউনিয়নের কিশোরী ও চেয়ারম্যানের হাতে রানার্স আপ ট্রফি তুলে দেয়া হয়।
