২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একতারা

একতারা -

জানো, একতারা তুই দেশের কথা বলরে আমায় বল অথবা সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী ইত্যাদি গানের কথাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় একতারা একান্তই আমাদের দেশীয় এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। আউল-বাউলের দেশ বাংলাদেশ। বাউলদের কণ্ঠে আছে মরমি গান আর হাতে থাকে একতারা। একতারা বাজিয়ে এ দেশের বৈরাগী-বোষ্টমীরা ভিক্ষে করেন। বৈরাগী, ভিক্ষুক আর বাউলদের তাই একতারা এক অনিবার্য উপকরণ। মরমি গানের সুর যেন একতারাতেই বাঁধা। এ বাদ্যযন্ত্রে একটি মাত্র তার থাকে বলেই নাম একতারা। লাউ, বেল, নারিকেল, কাঠ ইত্যাদি সামগ্রী ব্যবহার করে একতারার খোল বা বস বানানো হয়। তাই এলাকা ও উপকরণ ব্যবহারের তারতম্যের কারণে একতারার নামও হয় এক এক রকম। যেমন, সিলেটে একতারার নাম লাউ, রংপুরে বসমতি। থুনথুনে ও গোপীযন্ত্র নামেও একতারাকে ডাকা হয়।
খোল, এক টুকরো
বাঁশ আর স্টিলের এক গাছা তার- এ দিয়েই বানানো হয় একতারা। খোলের গায়ে নানারকম কারুকাজ ও নকশাও আঁকা হয়; এমনকি কেউ কেউ একতারার সৌন্দর্য আরো বাড়াতে খোলের গায়ে তামা-পিতলের পাত ব্যবহার করে কারুময় করেন। একতারা বানাতে দু’ হাত লম্বা এক টুকরো বাঁশ নেয়া হয়। তারপর সে বাঁশের উপরের দিকে একটা গিঁট রেখে সমান চার ফালি করে চিরে ফেলা হয়। চার ভাগের পর মুখোমুখি দু’ফালিকে ফেলে দেয়া হয়। অন্য দু’ফালি খোলের দু’পাশে বেঁধে দেয়া হয়। খোল বা বসের তলা থেকে এক গাছি স্টিলের তার বা শক্ত নাইলনের সুতা টানটান করে বসের উপর দিয়ে বাঁশের মাথায় কানের মাথায় টান করে বেঁধে দেয়া হয়। কান প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে সুতা বা তারকে টানটান করা যায়। বেশি টান করা সুতায় চিকন সুর ওঠে। হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে একতারা বাজানো হয়। কাঠ দিয়ে খোল বানিয়ে তার তলায় চামড়া দিয়ে ঢেকে আর এক ধরনের একতারা বানানো হয়। তাকে বলে সোয়ারি। একতারাকে মূলত বীণারই আদিরূপ বলে মনে করেন বিশিষ্ট লোকশিল্পবিদ ওয়াকিল আহমদ। এ দেশের বিভিন্ন মেলায় এক ধরনের খেলনা একতারা পাওয়া যায়। নারিকেলের খোল দিয়ে সেগুলো বানানো হয়। বৈশাখী মেলা ও লোকজ মেলায় সাধারণত সেগুলো বেশি পাওয়া যায়। শিশুরা এসব খেলনা একতারা কিনে ও বেসুরো বাজিয়ে বেশ মজা পায়।
ছবি : সংগ্রহ

 


আরো সংবাদ



premium cement