২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৃত্য বৃত্তান্ত

নৃত্য বৃত্তান্ত -

নাচ বা নৃত্যের কথা বলছি। ঠিক কবে থেকে নাচ শুরু হয়, সাল-তারিখ ঠিক করে বলা যায় না। ধারণা করা হয়, প্রাণী জগতের গোড়া থেকেই নাচের উদ্ভব। প্রাগৈতিহাসিক যুগে গুহার গায়ে শিকার কিংবা যুদ্ধের যে চিত্র দেখা যেত, তাতে নৃত্যের ভঙ্গিমার প্রকাশ ছিল। পরে এ ভঙ্গিমার পরিবর্তন-পরিশীলনের মাধ্যমে মানুষ বিনোদনের উপকরণ হিসেবে এর বিস্তার ঘটায়। প্রাচীন যুগে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আদি নৃত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। মিসরীয় সমাধিসৌধগুলোতে যে হস্তলিপি আছে তাতেও নাচের নিদর্শন রয়েছে। তৎকালীন সমাজে কৃষি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে এমনকি সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও নৃত্যের প্রচলন ছিল।
আমাদের প্রাচীন বাংলায়ও নাচের প্রচলন ছিল। ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম এমনকি ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে প্রস্তর মূর্তি, ভাস্কর্য কিংবা পুরাকীর্তি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে, যা প্রায় ২ হাজার বছর আগের। এ মূর্তিগুলোর দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, হাতের মুদ্রা, চাহনি, পোশাক, চুল বাঁধা, অলঙ্কার ইত্যাদি থেকে নৃত্য বিশেষজ্ঞরা প্রাচীন বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রমাণ পেয়েছেন। এ ছাড়া এখানে ক্লাসিক্যাল নৃত্যের সমঝদারি ছিল উল্লেখযোগ্য।
একসময় কলকাতাকেন্দ্রিক বাঈজিরা ছিল নৃত্যের ধারক ও বাহক। নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ ইংরেজদের দ্বারা নির্বাসিত হয়ে যখন ১৮৫৮ সালে কলকাতার উপকণ্ঠে মেটে বুরুজে বসবাস করতে এলেন তখন তার সাথে লক্ষৌর গোটা সঙ্গীতসভা কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। বিপুলসংখ্যক নৃত্য পটীয়সী বাঈজি এসে আশ্রয় নেন কলকাতায়। তখন থেকে সারা বাংলায় চলে বাঈজিদের যাতায়াত। জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কথক নৃত্যের একটা আবহ সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগেও বাঈজিরা কলকাতায় ছিলেন, রামমোহন রায় স্বয়ং ছিলেন ক্লাসিক্যাল নৃত্যের অনুরাগী। তার গৃহে আয়োজিত নৃত্যানুষ্ঠানের খ্যাতি ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে নাচকে ভদ্র এবং শিক্ষিত সমাজের অন্তর্গত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভাল্লাখেল কৃষ্ণ আয়ার ও রুক্সিনীদেবী।
আজকাল আমাদের দেশে নাচ শুধু শৌখিন চর্চা নয়, একে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে।
ছবি : সংগ্রহ


আরো সংবাদ



premium cement