২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুড় বৃত্তান্ত

-

আজ তোমরা জানবে গুড় সম্পর্কে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে গুড় তৈরি হয়ে আসছে। পনেরো শতকের প্রথম দিকে মা হুয়ান এ দেশে এসে গুড় দেখেছিলেন। লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়

জানো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গুড় তৈরি হলেও আমাদের দেশের গুড়ের রয়েছে এক আলাদা ঐতিহ্য? মাদারীপুরের মুছি পাটালি, ফরিদপুরের নলেন গুড় আর খাজুরার রস পাটালির ঐতিহ্য শুধুই এ দেশের। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে গুড় তৈরি হয়ে আসছে। পনেরো শতকের প্রথম দিকে মা হুয়ান এ দেশে এসে গুড় দেখেছিলেন। এমনকি ইউরোপের চিনি এ দেশে আসার আগেই তিনি এ দেশে তিন ধরনের চিনি দেখেছিলেন বলে তার বর্ণনাতে উল্লেখ করেন। এগুলো হলোÑ গুড়, সাদা চিনি ও মিসরি। মমতাজুর রহমান তরফদার তার মধ্যযুগের বাংলায় প্রযুক্তি ও সমাজ বিবর্তন বইয়ে এ সম্পর্কে লিখেছেন যে কণার আকারে গুড়ের দানা বাঁধানো, চিনির গুঁড়োয় শুভ্রতা আনয়ন এবং স্ফটিকীকরণজাতীয় পেশাদারি শিল্পকর্ম নিঃসন্দেহে ছিল সূক্ষ্ম প্রকৌশলগত ক্রিয়াশক্তির ফল। সে যুগে গুড় ও চিনি তৈরির সাথে সম্পৃক্ত ছিল একশ্রেণীর সম্প্রদায়। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী খেজুরের রস থেকে যারা গুড় ও চিনি তৈরি করতেন তারা সিউলি জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।
এ দেশে আখ, তাল ও খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। তবে সুন্দরবন এলাকায় গোলপাতা গাছ থেকেও গুড় তৈরি করা হয়। আখ নিংড়ে রস বের করা হয়। প্রাক-মুসলিম আমলে রচিত বিদ্যাকর কর্তৃক উদ্ধৃত বাচস্পতির একটি শ্লোকে সে যুগে হাতে ঘুরানো চাপযন্ত্রের সাহায্যে পৌণ্ড্রবর্ধনে আখ থেকে রস বের করা হতো বলে জানা যায়। তবে তাল ও খেজুরের রস আহরণের জন্য এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহৃত হয় না। শীতকালে খেজুরগাছ বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস আহরণ করা হয় এবং গরমকালে পুরুষ তালগাছের জটা কেটে রস সংগ্রহ করা হয়। গোলপাতা গাছের পুষ্পমঞ্জরি বা কাঁদি কেটে রস আহরণ করা হয়। রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুড় বানানো হয়। গাছ কাটার প্রথম দিনের টাটকা রস থেকে উন্নত মানের গুড় ও পাটালি তৈরি হয়। দোকাট ও তেকাটের রস থেকে হয় ঝোলা গুড়। সাধারণত এ গুড়ে তেমন দানা থাকে না, পাতলা ও আঠালো হয়। এ গুড়কে তোয়াক গুড়ও বলে। মুড়ি দিয়ে মেখে ও চিতোই পিঠে দিয়ে খেতে এ গুড় মজা লাগে। অন্য দিকে পাটালি হয় শক্ত, স্ফটিকার, পাতের মতো ও সুঘ্রাণযুক্ত। গুড় বেশি ব্যবহৃত হয় পিঠা তৈরিতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement