১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পিনন কাহিনী

-

আজ তোমরা জানবে পিনন সম্পর্কে। পিননের নকশা তোলা হয় চাকমা শিল্পের নকশারীতি ‘অলম’কে অনুসরণ করে। লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়

চাকমা মেয়েরা চার কোনাবিশিষ্ট নীল কাপড়ের ওপর লাল ডোরা দেয়া একখণ্ড কাপড় ঘাগড়ার মতো কোমরে পেঁচিয়ে তা হাঁটু পর্যন্ত জড়িয়ে পরে। একে বলা হয় পিনন। বুকে বক্ষবন্ধনীর মতো আরেক খণ্ড কাপড় পেঁচিয়ে পরে, যাকে বলে খাদি। শীতকালে দেহে পেঁচিয়ে পরে চাদর। পিনন, খাদি ও চাদর হলো চাকমা মেয়েদের প্রধান পোশাক। এসবই তারা নিজেরা বাড়িতে তুলো থেকে চরকায় সুতো কেটে তারপর সেই সুতোয় রঙ করে তাঁতে বুনে নেয়। ইদানীং পিননের রঙ ও নকশায় এসেছে বৈচিত্র্য ও জড়ির কাজ। পিননের নকশা তোলা হয় চাকমা শিল্পের নকশারীতি ‘অলম’কে অনুসরণ করে। অলম অনেক নকশার এক মাস্টার পিস। প্রায় প্রতিটি চাকমা বাড়িতেই তাঁত আছে এবং প্রায় সব চাকমা মেয়েই সেসব তাঁতে পিনন বুনতে জানে। পিনন চাকমা রমণীদের পোশাকরূপে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। বলা যায় পিনন চাকমা জাতিগোষ্ঠীর একজাতীয় ঐতিহ্য। চাকমা লেখক বিরাজ মোহন দেওয়ানের মতে, প্রায় ৫০০ বছর আগেও চাকমা জাতি আসাম, আরাকান ও বার্মায় (মিয়ানমার) নিজেদের এই পোশাক ঐতিহ্যের গৌরব রক্ষায় ছিলেন সচেষ্ট। প্রাচীন চাকমা লোকসাহিত্যেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘রাধারমণ ধনবতী’ পালায় পিননের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে পালায় পিননে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফুল-নকশারও একটা পরিচয় পাওয়া যায়। তবে ঠিক কবে, কে এই পালা রচনা করেছিলেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এর দ্বিতীয় খণ্ড ‘চাটিগাং ছাড়া’র রচনাকাল দ্বাদশ শতাব্দী বলে চাকমা রাজা বাহাদুর ভুবন মোহন রায় অনুমান করেন। অনুমান সত্য হলে প্রায় ৮০০ বছর আগেও পিনন পরিধানের রেওয়াজ চাকমা সমাজে ছিল।
এখনো প্রায় সব চাকমা মেয়েই পিনন পরে। তবে চাকমাদের খাদি পরিধানের রীতি বদলে গেছে। এখন অনেক চাকমা মেয়েই খাদি পরে ওড়না বা দোপাট্টার মতো, আগে পরত কাঁচুলি বা বক্ষবন্ধনীর মতো করে।


আরো সংবাদ



premium cement