২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চরকা কী

-

বলতে পারো চরকা কী? চরকা হলো তুলা থেকে সুতা তৈরির এক লৌকিক যন্ত্রবিশেষ। ইসামীর ফুতুহ-উস-সলাতীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি উত্তর ভারতে সুতা কাটা যন্ত্র চরকা বা চরখার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বাংলায় এ যন্ত্রের প্রচলন ঘটে চৌদ্দ শতকের শেষ দিকে। বিভিন্ন চীনা পর্যটকের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে সে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া ১৫ শতক থেকে বাংলার যেসব মসলিনসহ অন্যান্য মোটা সুতিবস্ত্র তৈরির জন্য সুতা তৈরি করা হতো তার জন্য ব্যবহৃত হতো চরকা। ১৬ শতকের প্রথম দিকে জনৈক পর্তুগিজ পর্যটক দুয়ার্তো বার্বোসা লিখেছিলেন, বাংলার লোকজন চরকায় সুতা কেটে বস্ত্র বয়ন করে। পুরুষেরা তৈরি করত চরকাযন্ত্র আর মেয়েরা সে যন্ত্রে সুতা কাটত। মূলত মোটা সুতিবস্ত্র বয়নের জন্য যে সুতোর দরকার হতো তা চরকায় কাটা হতো। মসলিনের মতো সূক্ষ্ম বস্ত্র বয়নের জন্য ছিল আদিম যন্ত্র টাকু বা তকলির ব্যবহার। তবে বাংলায় ব্যবহৃত চরকার বিশদ বিবরণ কোথাও লিপিবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান চরকার কাঠামো দেখে ধারণা করা হয় যে তা বিবর্তনের কয়েকটা ধাপ পার হয়ে এসেছে। চরকার চাকাই হলো মূল অংশ। চক্কর বা ঘূর্ণনের দ্বারা সুতা তৈরি হয় বলেই নাম চরকা। চক্র বা চাকার সাথে একটা হাতলের যোগসূত্র স্থাপন করা হয় ফিতে বা রশি দিয়ে। হাতল হাত দিয়ে ঘোরানো হয়। হাতের কুশলতায় চিকন বা মোটা সুতা তুলা থেকে তৈরি করা হয়। চরকা সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। চাকমা মেয়েরা প্রায় সবাই চরকায় সুতা কাটতে জানে এবং তাঁতে সুতিবস্ত্র বয়নে বেশ পারদর্শী। তারা জুমের কার্পাস তুলা থেকে সুতা তৈরি করে। তারা চরকাকে বলে চরকি। বাংলাদেশের মুসলমান ও হিন্দু তন্তুবায়কে বলে ‘জোলা’ ও ‘তাঁতি’। এরাই চরকায় সুতা কাটে এবং সেসব সুতা দিয়ে বস্ত্র বোনে। মধ্যযুগে এ দেশে চরকার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কাপড়ের কল আসায় এই গ্রামীণ বস্ত্র বয়ন শিল্পে ভাটা পড়ে। ধীরে ধীরে কমে আসে চরকার ব্যবহার। এখন অধিকাংশ তাঁতিই কলের সুতা ব্যবহার করে, চরকায় আর সুতা কাটে না। এমনকি উপজাতি গ্রামে গিয়েও দেখা গেল পুরনো চরকা পড়ে আছে অনাদরে, অব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে। তাই এ যন্ত্রটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।


আরো সংবাদ



premium cement