২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিকারি জাতি ওরোকেন

-

আজ তোমরা জানবে ওরোকেন জাতি সম্পর্কে। এরা শিকার থেকে ফেরার পরে এবং উৎসবের সময় নারী-পুরুষ ও শিশুরা একত্রিত হয়ে
নাচ-গান করে। লিখেছেন লোপাশ্রী আকন্দ

জানো, ওরোকেনরা মূলত শিকারি জাতি? ঘোড়ায় চড়ে শটগান এবং কুকুর ব্যবহার করে এরা শিকার করে। বংশপরম্পরায় এরা ঐতিহ্যবাহী তাঁবুতে বাস করে, ওরোকেন ভাষায় যাকে বলা হয় জিয়ান-রেনঝু।
গ্রীষ্মকালে এ তাঁবু ঢাকা হয় ভুর্জ গাছের বাকল দিয়ে, আর হাড়কাঁপা শীতের ঋতুতে এগুলো ঢাকা হয় হরিণের চামড়া দিয়ে।
ওরোকেন চীনের সরকার স্বীকৃত একটি জাতিÑ একটি নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। ওরোকেন অর্থ পর্বতমালার মানুষ। আদিতে এ মানুষেরা ছিল বেই শাইওয়েই জনগোষ্ঠীর অংশ। ৪২০ ও ৫৪৯ সালের মাঝামাঝি এরা নিজস্ব ওরোকেন পরিচিতি লাভ করে।
ওরোকেনরা বাস করে উত্তর-পূর্ব চীনের বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর হিংগ্যান পর্বতমালার বনভূমিতে। এ বনভূমিতে রয়েছে অনেক হরিণ এবং অন্যান্য বন্যপশু। বেশিরভাগ ওরোকেনের বাস ওরোকেন স্বশাসিত জেলায় (ব্যানার)। এটি বৃহত্তর হিংগ্যান পর্বতমালায় অবস্থিত। আয়তন প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। অন্যদের বসবাস অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার কয়েকটি স্থানে এবং হেইলংজিয়াং প্রদেশে।
ওরোকেনরা কথা বলে ওরোকেন ভাষায়। এটি আলতাইক ভাষা পরিবারের মাঞ্চু-তুংগুসিক গোষ্ঠীর তংগুস শাখার অন্তর্ভুক্ত। ওরোকেন ভাষার লিখিত রূপ নেই। বেশির ভাগ ওরোকেন লেখাপড়া করে চীনের সবচেয়ে বড় নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হ্যানদের ভাষায়।
ওরোকেনদের বলা হয় নাচ ও গানের জাতি। শিকার থেকে ফেরার পরে এবং উৎসবের সময় নারী-পুরুষ ও শিশুরা একত্রিত হয়ে নাচ-গান করে। এদের লোকগানে প্রকৃতির প্রশংসা, ভালোবাসা, শিকার ও সংগ্রাম এবং জীবনের অন্যান্য দিক প্রতিফলিত। কালচে ভালুক যুদ্ধ ও জংলি মোরগ নাচ জনপ্রিয়। এ দুটি নাচে প্রাণী ও পাখির অঙ্গভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা হয়। পেংনুহুয়া (এক ধরনের হার্মোনিকা) ও ওয়েনটুবেন (এক প্রকার ঢোল)Ñ এ দুটি বাদ্যযন্ত্র ঐতিহ্যবাহী। ওরোকেন সমাজে অনেক কাহিনী, রূপকথা, লৌকিক উপাখ্যান এবং প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত বংশপরম্পরায়।
১৯৪৯ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরে ওরোকেন জনজীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দাউর ও হ্যান কৃষকদের কাছে শিক্ষালাভ করে ১৯৫৬ সালে এরা কৃষিকাজ শুরু করে। ১৯৭৫ সালে নিজস্ব স্বশাসিত এলাকায় এরা ওরোকেন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ওরোকেন এলাকায় টাউনশিপ স্থাপন করে চীনা সরকার ওরোকেন জাতির সামাজিক ও বৈষয়িক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
ওরোকেনদের বেশির ভাগ শ্যামানিবাদী। প্রায় ৩০ জন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী রয়েছে। ওরোকেন সমাজে এক বিয়ে প্রচলিত।
ওরোকেন জনসংখ্যা প্রায় আট হাজার ২০০।
ওয়েবসাইট অবলম্বনে


আরো সংবাদ



premium cement