২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কে কী------------ কেন কিভাবে

রোচার কথা

-

আজ তোমরা জানবে ‘রোচা’ সম্পর্কে । পাহাড়ি জনপদে গুঁড়া করার কাঠের তৈরি বিশেষ পাত্রকেই ত্রিপুরা বা টিপরারা বলেন রোচা । লিখেছেন মৃত্যুঞ্জয় রায়


তোমরা জানো, আধুনিককালের কল আসার আগে চাল, মরিচ, ধনিয়া, হলুদ ইত্যাদি গুঁড়া করা হতো ঢেঁকি বা কাঠের তৈরি এক ধরনের পাত্রে। পাহাড়ি জনপদে গুঁড়া করার কাঠের তৈরি ওই বিশেষ পাত্রটিকেই ত্রিপুরা বা টিপরা আদিবাসীরা বলেন ‘রোচা’, চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘ইচাই’, মারমা ভাষায় বলে ‘ছুং’। যে আদিবাসী যে ভাষাতেই বলুক না কেন তা আসলে একালে লোহার তৈরি হামান দিস্তার পূর্বসূরি। ঢালাই লোহায় তৈরি হামান দিস্তায় পান ছেঁচা থেকে মসলা পেষার কাজ পর্যন্ত করা হয়। রোচা দিয়েও ঠিক একই কাজ করা হয়, তবে সেটা কাঠের তৈরি।
রোচা তৈরি করা হয় শক্ত কোনো কাঠ দিয়ে। পাহাড়িরা সাধারণত সেগুন বা গোদা কাঠ দিয়ে রোচা তৈরি করে থাকেন। দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা পুরনো সেগুন গাছের সার হয়ে যাওয়া শক্ত অংশের একটা আস্ত টুকরো খোদাই করে রোচা বানানো হয়। কাঠের একপ্রান্তে খোদাই করে প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত চোঙার মতো গর্ত তৈরি করা হয়। গর্ত হয় মসৃণ। গর্তের মধ্যে হলুদ, মরিচ, ধনিয়া বা চাল ফেলে একটা লম্বা ডাণ্ডা দিয়ে ছেঁচে সেসব গুঁড়ো করা হয়। ডাণ্ডাটা এক মানুষের প্রায় বুক সমান লম্বা হয়। ডাণ্ডাকে টিপরা বা ত্রিপুরা ভাষায় বলা হয় ‘লাঠা’ বা ‘রোমা’। রোমা হাতে ধরে তা দিয়ে গর্তের মধ্যে ফেলা মসলা বা চালকে ঘন ঘন আঘাত করা হয়। তার ফলে গুঁড়ো হয়ে যায়। আদিবাসীদের সবার বাড়িতে সাধারণত রোচা থাকে না। যার বাড়িতে থাকে তার বাড়ি গিয়ে অন্যরা মরিচ বা মসলা গুঁড়ো করে নিয়ে আসেন। টিপরারা এ ধরনের উপকরণ গ্রামের মন্দিরে রাখেন। সেখানে গিয়ে পাড়ার সবাই গুঁড়ো করে নিয়ে আসেন। রোচা আদিবাসীদের এক সুপ্রাচীন গার্হস্থ্য ঐতিহ্য যা এখনো তারা ধরে রেখেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement