এমপি আজিম হত্যাকাণ্ড : উদ্ধার করা টুকরো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ মে ২০২৪, ২১:৩৫
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের হত্যা মামলায় তথ্য প্রমাণ যোগাড় করতে মঙ্গলবার থেকে একাধিক নতুন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য ঘেঁটে প্রায় পাঁচ কেজির খণ্ডাংশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা। সাথে কিছু চুল, চামড়া এবং হাড়ও মিলেছে।
তবে ওই কর্মকর্তা এটাও বলছেন, ‘এগুলি মানুষের শরীরের মাংস- হাড়-চুল কিনা বা আজীমেরই দেহের অংশ কিনা, তা নিশ্চিত করা যাবে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমেই। ওইসব মাংস, হাড় ইত্যাদি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিমের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ এদিন সকালেই জানান যে ফ্ল্যাটে এমপিকে হত্যা করা হয়েছিল, তার সুয়ারেজ লাইন বা পয়োনালা এবং তার কাছেই ভাঙড় খালের ওপরে একটি কাঠের সেতুর কাছে একটি অংশে তল্লাশি চালানোর জন্য তারা পশ্চিমবঙ্গের সিআইডিকে অনুরোধ করেছেন। এরপরই ওই জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তদন্তকারী শাখা সিআইডি।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন যে নতুন কিছু সূত্র পাওয়া গেছে এই ঘটনায় ধৃতদের কাছ থেকে। সেই অনুযায়ীই নতুন জায়গাগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
পয়োনালায় কী খোঁজা হচ্ছে?
সিআইডির দু’টি সূত্র জানিয়েছে যে বাথরুমের কমোডের ভেতরে আজীমের দেহাংশগুলো ফেলে তা ফ্লাশ ব্যবহার করে পয়োনালা দিয়ে বার করা হয়ে থাকতে পারে বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওই কারণেই পয়োনালাসহ সেপ্টিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এই তথ্য তারা পেয়েছেন ঢাকা আর কলকাতায় ধৃতদের জেরা করে।
ঢাকা পুলিশের ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ এদিন বলছিলেন, ‘প্রথমে যে খালটার কথা সিআইডি বলেছিল, সেখানে তল্লাশি চলেছে আজকেও। পাশাপাশি আমরাও তাদের কিছু অনুরোধ করেছি যে ওই বাসায় যে তিনটে কমোড আছে, সেগুলি ফ্লাশ করার পরে যেখানে গিয়ে বর্জ্য জমা হয়, সেটা ভাঙ্গতে বলেছি।’
পুরো সঞ্জীবা গার্ডেন্স আবাসিক কমপ্লেক্সের যে প্রধান সুয়ারেজ লাইন, সেটা আবাসনের বাইরে বেরিয়ে মিশেছে ভাঙড় খালে।
রশীদ যে কাঠের সেতুর উল্লেখ করছিলেন, তার কিছুটা আগেই প্রধান সুয়ারেজ লাইন এসে ওই খালে মিশেছে। সেখানেই মঙ্গলবার ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
সিআইডি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সোমবার যখন এই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়, তখনই পয়োনালার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন ঢাকার গোয়েন্দারা।
বাগজোলা খালের নতুন জায়গায় কী খোঁজা হচ্ছে?
সঞ্জীবা গার্ডেন্সের প্রধান ফটকের কাছেই কোঁচপুকুর মোড়। সেখানে একটি কাঠের সেতু রয়েছে ভাঙড় খালের ওপরে। ঢাকা থেকে আসা গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ এই কাঠের সেতুর কথাই উল্লেখ করেছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে কলকাতা পুলিশের ডুবুরি নামানো হয়। ডুবুরিরা বলছিলেন ওই জায়গায় এত বেশি পাঁক, যে তারা জলে ডুবেও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছেন না।
বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশির পরেও কিছু পাওয়া যায়নি সেখানে। একটা পর্যায়ে কলকাতা পুলিশের ড্রোন উড়িয়েও খালের একটা অংশ দেখে নেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা বলছেন, কাঠের সেতুর কাছে আজীমের কিছু পোশাক ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছেন। তবে এখানে যে আজীমের দেহাংশের তল্লাশি চালানো হচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করেছেন সিআইডির তদন্তকারীরা।
দেহ না পেলে কি হত্যা প্রমাণ করা সম্ভব?
চারদিন ধরে ভাঙড় এলাকার বাগজোলা খালের একটি নির্দিষ্ট অংশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাংশের খোঁজে।
মঙ্গলবার থেকে তার খুনের ঘটনাস্থল ফ্ল্যাটের সুয়েরেজ লাইনসহ নতুন কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি শুরু হলো।
এখনো পর্যন্ত শুধু ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কিছু সন্দেহভাজন পদার্থ উদ্ধার করা ছাড়া দেহাংশ বা আজীমের পরনের পোষাক অথবা যে অস্ত্র দিয়ে তার শরীর টুকরো করা হয়েছিল, সে সবের কোনো খোঁজ মিলেনি। এই অবস্থায় কি খুনের মামলা আদৌ প্রমাণ করা সম্ভব হবে?
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলছিলেন ডিজিটাল প্রমাণ, অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ইত্যাদি দিয়ে মামলা দাঁড় করানো সম্ভব।
তার কথায়, ‘অভিজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তারা অবশ্যই পারিপার্শ্বিকতা, ডিজিটাল তথ্য প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, পি-সি, পি-আর বিবেচনায় রেখে বিজ্ঞ আদালতে যে রিপোর্ট জমা দেবেন, তার ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত লজিক্যাল এবং জুরিসপ্রুডেন্স ডিসক্রিশান কাজে লাগিয়ে এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারবেন। সেটা করা খুব কষ্টকর হবে বলে আমি মনে করি না। তবে আরো তো অনেক দিন তদন্ত চলবে।’
অর্থাৎ তিনি মনে করছেন, আরো প্রমাণ যোগাড়ের সময় শেষ হয়ে যায়নি।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা