২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে কারণে তিন বিভাগ থেকে মানবপাচার সবচেয়ে বেশি

যে কারণে তিন বিভাগ থেকে মানবপাচার সবচেয়ে বেশি। - ছবি : সংগৃহীত

অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়া চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশের লোক, যাদের অনেকেই বাংলাদেশী। বাংলাদেশে ২০২০ সালে যেসব মানবপাচার শনাক্ত করা গেছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে। জাতিসঙ্ঘের মানবপাচার-বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসঙ্ঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং জাতিসঙ্ঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দফতর যৌথভাবে ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন্স ইন বাংলাদেশ’ নামে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

জেলা হিসেবে বাংলাদেশের সাতটি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচার শনাক্ত করা হয়েছে। এসব জেলা হচ্ছে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ। এসব জেলা থেকে প্রতি লাখে দেড়জনের বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়।

ঢাকা, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের মানবপাচার চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সবচেয়ে বেশি পাচার হয় খুলনা বিভাগে।

এসব বিভাগে কেন বেশি?
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সব এলাকার বাসিন্দারাই মানবপাচারের শিকার হয়। তবে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট-এই তিন বিভাগের মানুষ বেশি পাচার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। যেসব এলাকার সাথে ভারতের সীমান্ত বেশি সে সব এলাকায় মানবপাচার বেশি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় খুলনা বিভাগের কথা।

এই বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্ত থেকে কলকাতাও বেশি দূরে নয়। এ কারণে ২০২০ সালে ওই এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অভিবাসন নিয়ে গবেষণার কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, যেকোনো সীমান্ত এলাকা যেখানে পারাপারটা তুলনামূলক সহজ, সেখানে অনিয়মিত অভিবাসনের সাথে সাথে মানবপাচারও হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের কিছু এলাকা মানবপাচারের হাব বা পকেট হিসেবে কাজ করে। এসব এলাকায় মানবপাচারকারী চক্র বেশ সক্রিয় থাকে এবং তারা সেখানকার বাসিন্দাদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে।

মেরিনা সুলতানা আরো বলেন, যেসব জেলা পকেট হিসেবে কাজ করে, সেখানের অনেক মানুষ আগে থেকেই বিদেশে থাকে এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরাও যেতে চায়। এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচারের শিকার হয় নারীরা। উদাহরণ হিসেবে তিনি মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদীর কথা তুলে ধরেন।

জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে যে, যেসব কারণে মানবপাচার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে উন্নত জীবনের আশা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রলোভনে। প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক কারণে পাচারের শিকার হন।

অন্য দিকে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে সৌদি আরব ১১ জনকে, ভারত থেকে পাঁচজনকে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন করে প্রত্যাবাসিত করা হয়েছে। এরা সবাই মানবপাচার শিকার হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাবাসন করে ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি আরব থেকে। এরপরে ওমান থেকে দুইজন ও ভারত থেকে একজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

মেরিনা সুলতানা জানান, ভালো চাকরির প্রলোভনে যারা পাচারের শিকার হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জানে না যে তারা আসলে পাচার হচ্ছে। আর পাচারকারীরা তাদেরকে না বলে বিদেশ নিয়ে বিক্রি করে দেয়।

যেসব বিষয় মানবপাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক কারণ, অন্তরঙ্গ সঙ্গী (যে নিজেই মানবপাচারকারী), অভিবাসনের প্রলোভন, শিক্ষা ও বিদেশী ভাষা জানার অভাব, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যাযুক্ত পরিবারের সদস্য, মা-বাবার যত্ন না পাওয়া শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।

’ট্রাফিকিং ইন পারসন্স ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা মানবপাচারে যুক্ত থাকে, তারা অন্য কাজের তুলনায় এ কাজে বেশি অর্থ আয় সম্ভব হয় বলে এই অপরাধের সাথে জড়ায়। তাদের হিসাবে, প্রতিটি মানবপাচারের জন্য একজন পাচারকারী ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করে। যে আয় প্রচলিত পেশার আয়ের তুলনায় অনেক বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসনের চুক্তি রয়েছে সেসব দেশ থেকে ফেরত আনা ব্যক্তিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু যেসব দেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি নেই, সেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ পাচার হয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ভেতরেই অনেকে পাচারের শিকার হয়।

এতে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩০টি মানবপাচারের বিষয়ে জানা গেছে। এছাড়া ২০১৭ সালে ৭৭৮টি ও ২০১৮ সালে ৫৬১টি মানবপাচারের বিষয়ে জানা যায়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement