২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাসে রাতভর ডাকাতদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ডা. শফিকুল

ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব - ছবি - সংগৃহীত

জরুরি কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজিব। কিন্তু কাজ শেষ করে রাতে ফেরার কোনো বাস পাচ্ছিলেন না। তাই এক বন্ধুকে নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুরে যান তিনি। যদি সেখানে টাঙ্গাইল যাওয়ার কোনো বাস পাওয়া যায়- এই আশায়।

পেয়েও যান তারা। ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাস পেয়ে সেটিতে ওঠেন দুই বন্ধু। কিন্তু বাসের ভেতরা কিছুটা অন্ধকার আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। জিজ্ঞেস করায় বাসের হেলপার জানালেন, ‘বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমাচ্ছেন। এছাড়া পথ থেকে আরো যাত্রী উঠবেন। ‘ যেহেতু অনেক রাত তাই অতশত ভাবার সময়ও ছিল না ডা. শফিকুলের। বসে যান সিটে। কত বড় বিপদ যে তার জন্য অপেক্ষা করছে, তা আঁচও করতে পারেননি।

কিছুক্ষণ পর বাসটি নির্জন একটা জায়গায় পৌঁছালে সাত-আটজন গলায়, পেটে ছুরি ধরে তাদের জিম্মি করে। কেউ একজন বলে ওঠেন, এ বাসের সবাই ডাকাত!

এ কথা শোনার সাথে সাথেই শফিকুল আত্মসমর্পণ করে বলেন, যা আছে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো ক্ষতি করবেন না।

এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা শফিকুলের তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি এটিএম কার্ড, দুটি ওয়ালেট, বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর নেয়। সেই সাথে তাকে বিকাশ থেকে টাকা দিতেও বাধ্য করে। সবকিছু কেড়ে নেয়ার পর তার চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে ডাকাত দল। অ্যাজমা রোগী হওয়ায় শফিকুলের শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তিনি ডাকাতদের তার ব্যাগ থেকে ইনহেলার দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা দেয়নি। তখন মৃত্যুর ভয়ে শফিকুল শুধু কলেমা পড়ছিলেন। তার মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ বুঝি আর দেখা হবে না।

এ সময় তিনি আশপাশের লোকজনের গোঙানির শব্দ পান। তার মতো অন্যদেরও সব কিছু নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করছিল ডাকাত দল। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চন্দ্রার আগে কবিরপুর এলাকায় শফিকুলের বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয় ডাকাতরা। এরপর শফিকুলকে মারতে মারতে পেছনে নিয়ে যায়। রাতভর ডাকাতরা চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। কমপক্ষে ৮০টি থাপ্পড় মারা হয়েছে তাকে।

একটা সময় বাসটি অনেকক্ষণ থামিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে বাসচালকের হেলপার পরিচয়ে একজন তার চোখ ও হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন।

ওই হেলপার দাবি করেন, তিনি আর বাসচালকও ভুক্তভোগী। ডাকাত দলের সদস্যরা যাত্রী সেজে তাদের বাসে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল। এ জায়গাটি যাত্রাবাড়ীর কাছে বুঝতে পেরে শফিকুল বাসটি যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যেতে বলেন চালককে। কিন্তু চালক ও হেলপার প্রথমে রাজি হননি। তারা বলেন, মামলা করলে বাস থানায় আটকে রাখবে। মালিকের সাথে পরামর্শ না করে এ সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।

যাত্রাবাড়ী পৌঁছে শফিকুল বাস থেকে নেমে দৌঁড়ে মাতুয়াইলের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথ (আইসিএমএইচ) হাসপাতালে যান। সেখান থেকে পরে যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে পুলিশকে সব কিছু খুলে বলেন।

শুনে তারা বলেন, যেহেতু আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছেন, তাই অভিযোগ দিতে হবে সেখানে। শুনে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় আসেন। সেখান থেকে বলা হয়, যেখানে নেমেছেন অভিযোগ সেখানে দিতে হবে। কোনো থানাই যখন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিল না, তখন ক্লান্ত তিনি বাসায় ফিরে যান।

ভয়ঙ্কর এ অভিজ্ঞতার কথা রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন ডা. শফিকুল।

তিনি লিখেছেন, মহাসড়কে চলাচলকারী একটা বাস ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা শহরে সারারাত ঘুরে ডাকাতি করে, কিন্তু ঢাকা সিটির কোনো চেকপোস্ট সেটি থামায় না, বিষয়টা খুবই ভাবনার।

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাতে যাতায়াত না করার এবং কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে বাসে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে চিকিৎসক শফিকুল থানায় মামলা করতে এসেছিলেন জানিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামীন কবির বলেন, ‘তিনি এসেছিলেন। তাকে ঘটনাস্থলের থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।’

তবে সোমবার শফিকুলের সাথে উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে যোগযোগ করেছিল বলে জানান।

ঘটনাটি সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হওয়ার পর উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মোঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, গণমাধ্যমে ঘটনাটি শুনে একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তিনি নিজেই ওই চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছেন।

‘এখন তিনি যদি মামলা করতে চান, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement