২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পাহাড়ে সন্ত্রাসী হামলায় একবছরে ১৮ জন নিহত

পাহাড়ে সন্ত্রাসী হামলায় একবছরে ১৮ জন নিহত। ইনসেটে- ৩০ নভেম্বর নিহত রাঙ্গামাটির বন্ধুকভাঙ্গায় আবিস্কার চাকমা। - নয়া দিগন্ত

পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা কিছুতেই থামছে না। প্রায় প্রতি মাসে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে  চরম উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছে পাহাড়ের মানুষ।গত এক বছরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান  তিন পার্বত্য জেলায়
সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছে।

পাবত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর পূর্তির দুই দিন আগে ৩০ নভেম্বর সর্বশেষ নিহত হন রাঙ্গামাটির বন্ধুকভাঙ্গায় আবিস্কার চাকমা। গত একবছরের মাসোয়ারি এক হিসাব মতে ১৮ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।

বছরের প্রথম ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়ি রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সমর বিকাশ চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ৪ মার্চ রাঙ্গামাটির লংগদুতে নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ।

১ এপ্রিল রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়িতে সহকর্মীর গুলিতে জে এস এস এমএন লারমা দলের সশস্ত্র কমান্ডার বিশ্ব চাকমা ওরফে যুদ্ধ নিহত হন । ১০ এপ্রিল রাজস্থলী সীমান্ত সড়কে ১ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয় ।১৫ জুন রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি উপজেলার লুলাংছড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কার্বারী (গ্রাম প্রধান) নিহত হন।

২০ জুন বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে এক যুবককে। ২৭ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ইউপিডিএফ’র কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে । ২৮ জুন বান্দনবানের নাইক্ষংছড়ির সীমান্তে অজ্ঞাত পুরুষের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুলাই রাঙ্গামাটি রাইখলীতে সন্ত্রাসী দলের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ১ জন নিহত হন। ১৮ জুলাই খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খল কুমার ত্রিপুরা নামে এক যুবক নিহত হয়। ১৯ জুলাই বান্দরবানে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৫ জুলাই রাঙ্গামাটি মগবান এলাকায় বাসিরাম তংচঙ্গ্যা নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

২৭ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ইছাছড়ি এলাকার পাহাড়ের ঢালুদে যুবকের মরদেহ লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাঘাইছড়ির মধ্যম বঙ্গলতলী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাসায় নিহত হন সুরেশ চাকমা নামে একজন। ১৬ অক্টোবর কাপ্তাই চিৎমরমে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৩ নভেম্বর বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামীলীগের নেতা উথোয়ানু মারমা নিহতহন। তার স্ত্রী হন গুলিবিদ্ধ।

এবছরের ৩০ নভেম্বর সর্বশেষ রাঙ্গামাটির বন্দুকভাঙ্গা এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে জন সংহতি সমিতির-জেএসএস এর নেতা আবিস্কার চাকমা নামে একজন  নিহত হন।

এছাড়া বছর জুরে অস্ত্র উদ্ধার ও আটক করা হয় প্রায় ৩০ জনক। ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারী খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রসহ এক যুবক আটক  করা হয় । ১২ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি রাজস্থলীতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ জে এস এস কর্মী আটক হয় । ১৯ জানুয়ারী বিলাইছড়িতে অস্ত্র গোলাবারুদসহ ৭ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।

১৬ ফেব্রুয়ারী রাঙ্গামাটি জুরাছড়িতে সেনা অভিযানে অস্ত্রসহ একজন আটক হয়।১৮ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়িতে অধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে গভীর রাতে হয় গুলিবিনিময়।২ মার্চ খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় অস্ত্র, গুলি, ম্যাগজিন, নগদ অর্থসহ ৪ সন্ত্রাসীকে আটক করে যৌথ বাহিনী। খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় অস্ত্র, গুলি, ম্যাগজিন, নগদ অর্থসহ চার সন্ত্রাসী আটক।  ১৫ মার্চ কাপ্তাই রাইখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ একজন আটক হয় ।

২২ এপ্রিল বাঘাইছড়িতে মোটর সাইকেলে আগুন ধরয়ে পুড়িয়ে দিলো সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ২৯ এপ্রিল বান্দরবানে সেনা অভিযানে ভারী মারনাস্ত্রের গুলি, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার। ৮মে নানিয়ারচরে চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার হত্যাকান্ডের আসামী অস্ত্রসহ আটক করেছে যৌথবাহিনী। ১৮ জুন কাপ্তাই রাইখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ১জন গ্রেফতার করা হয়। একই দিনে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ৪জন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী আটক হয়।

আগষ্ট মাসের ১ তারিখে রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনীর অভিযানে এ কে ২২ রাইফেল, ৭৭ রাউন্ড গুলি, এ্যামুনিশান, ১টি ম্যাগজিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার। ৬ আগষ্ট খাগড়াছড়ির পানছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ইউপিডিএফ মূল দলের গুলি বিনিময় অস্ত্র ও এ্যামেনিশানসহ এক সন্ত্রাসী আটক। একই দিনে রাঙ্গামাটি রাজস্থলীতে জে এস এসের মূল দলের কালেক্টরকে আটক করে যৌথ বাহিনী।

৮ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফ চীফ টোল কালেক্টর লালন চাকমা অস্ত্রসহ আটক হয় । ৯ আগষ্ট রাজস্থলীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে হয় অস্ত্র উদ্ধার। ১০ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ মূল দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আটক করে চাইনিজ পিস্তল, ম্যাগজিন, ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ১৪ আগষ্ট রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়িতে সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপের দুই সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক। একই দিনে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে সেনা অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ ইউপিডিএফ মূল দলের ১জন আটক হয়।

২০ আগষ্ট বান্দরবান বিজিবি অভিযানে ৩টি মর্টাল শেল ও ২টি আর এল গোলা উদ্ধার হয়। ২৩ আগষ্ট রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় সেনা অভিযানে একে-৪৭সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়। ২৩ আগষ্ট বান্দরবানে রুমায় দূর্গম এলাকার মাটির নিচে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ১২টি মর্টাল শেল উদ্ধার হয়। ২৪ আগষ্ট রাঙ্গামাটি জীবতলী এলাকা সেনা অভিযানে ২টি অত্যাধুনিক আগ্নেযাস্ত্র ও তাজা গুলিসহ ১জন আটক করা হয়।

সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে  সেনা ও বিজিবি’র যৌথ অভিযানে জে এস এসের সন্ত্রাসী গ্রুপ সাথে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। ৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি লংগদুতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কমল ধন চাকমা নামে এক ইউপিডিএফ কর্মী আটক হয় । সেপ্টেম্বর রাঙ্গামািট সদরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, গুলিসহ জনসংহতি সমিতির কালেক্টর পুনেন্টু চাকমা আটক হয়।

অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ দুইদিন রাঙ্গামাটিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ৭জন গ্রেফতার হয়। ২৫ অক্টোবর রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলিসহ ১জন আটক করা হয়। ২৬ নভেম্বর রাঙ্গামাটি বন্দুক ভাঙ্গায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।


আরো সংবাদ



premium cement