২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রাহকের শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও কর্ণফুলী মাল্টিপারপাসের মালিকপক্ষ

১০ কর্মচারী গ্রেফতার
প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে চেকবই, পাসপোর্ট, টাকাসহ বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়।ইনসেটে, মালিক জসীম - ছবি : সংগৃহীত

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের শতকোটি টাকা লুটে নিয়ে পালিয়েছে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মালিকপক্ষ। তবে প্রতিষ্ঠানটির ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪-এর একটি দল।

র‌্যাব বলছে, জসীম উদ্দিন যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে চেষ্টা করছেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণা নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, সমবায় সমিতির নামে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জসীম উদ্দিন ২৫-৩০ হাজার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ১১০ কোটি টাকা লোপাট করেছে। বর্তমানে তাদের অ্যাকাউন্টে আছে ৮০ লাখ টাকার মতো।

ভুক্তভোগীরা পোশাককর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি-ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মীসহ সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানটির সদস্যসংখ্যা পাঁচ শতাধিক।

গতকাল সোমবার বেলা দেড়টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ১০ জনকে গ্রেফতার করে। সেইসাথে মিরপুরের নান্নু মার্কেট এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে ১৭টি মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব বই, ২৬টি চেক বই, ২টি হিসাব বই, ৩টি সিল, ১২০টি সঞ্চয়ী হিসাবের বই, পাসপোর্ট, টাকাসহ বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জসীম উদ্দিন একজন অলৌকিক, ভৌতিক চরিত্র। সমিতির সদস্যদের তিনি দেখা দেন না। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি দেশেই আছেন। আমরা সব বন্দরকে জানিয়ে দেব, তিনি যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন।’

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় জসীম উদ্দিনের স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালক ও শ্যালিকা আছেন বলেও মোজাম্মেল হক জানান।

র‌্যাব জানিয়েছে, জসীম উদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০০৩ সালে তিনি কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড চালু করেন। সমবায় অধিদফতরের অনুমোদন নেন ২০০৬ সালে। সেটি নবায়নও করিয়েছেন। এমনকি ২০১৯ সালে অধিদফতর নিরীক্ষাও করেছে প্রতিষ্ঠানটির। তখনো প্রতারণা বিষয়টি বেরিয়ে আসেনি। র‌্যাব ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্ম সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করে।

কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কোম্পানি লিমিটেড নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখত। এক লাখ টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিত তারা। আর যে গ্রাহক জোগাড় করে দিত, তাকে দেয়া হতো এক হাজার টাকা। আবার সঞ্চয়ী হিসাবও চালু করেছিল তারা।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, কেউ যদি মাসে ১ হাজার টাকা জমা দিত, তাহলে পাঁচ বছর পর তাকে ৯০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেছিল কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা ভেঙে ভেঙে প্রথম কয়েক মাস দু-চার হাজার টাকা করে দিলেও পরে তারা ঘোরাতে শুরু করে।

র‌্যাব জানায়, ভুক্তভোগীদের মূলধনের পুরোটাই হাতিয়ে নিয়েছেন জসীম উদ্দিন। পরে এই টাকা দিয়ে জসীম মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কর্ণফুলী রিয়েল এস্টেট লি., জসীম ইন্টারন্যাশনাল ওভারসিস লিমিটেড, জসীম স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্ম লিমিটেড, জসীম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, জসীম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও জসীম নিট কম্পোজিট লিমিটেডের মালিক হন। তার দুই স্ত্রীর একজন বসুন্ধরায় ও অন্যজন গ্রিন রোডে থাকেন। জসীমের একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে, গাজীপুরের মাওনায় প্লট ও তিনতলা বাড়ি, মিরপুরে বাড়ি, ঢাকার বাইরে কয়েক একর জমির সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement