১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য পাশের দেশে পাচার করেছে চক্রটি

কিডনি প্রতারকচক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। - ছবি : সংগৃহীত

ভয়ঙ্কর কিডনি প্রতারচক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র‍্যাব-৫, র‍্যাব-২ ও র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা এলাকা থেকে কিডনি কেনাবেচা চক্রের অন্যতম হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন চক্রের মূলহোতা মো: শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মো: মেহেদী হাসান (২৪), মো: সাইফুল ইসলাম (২৮), মো: আব্দুল মান্নান (৪৫) ও মো: তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (৩৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের চারটি পাসপোর্ট, মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ও দেশী-বিদেশী মুদ্রা জব্দ করা হয়।

চক্রটি প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিলেও কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা দিত। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য পাশের দেশে পাচার করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করছে। একইসাথে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তার করছে। এ কারণে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‍্যাব।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি কেনাবেচার সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন-এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।

চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

পরে তৃতীয় গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং ও অন্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি প্রতিস্থাপনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভক্তভোগী ডোনারকে পাশের দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

তিনি আরো বলেন, এই চক্রের সাথে পাশের দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভুক্তভোগীকে বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে বিমান ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠায়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিত। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে অগ্রীম ২ লাখ টাকা দিত।

কিডনি প্রতিস্থাপনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনিদাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। চক্রের হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা, মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনিদাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত।

আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকত। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে চুপ রাখার চেষ্টা করত।

চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামি শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ পাশের দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন।

ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেসেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামের দুটি পেজের অ্যাডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পাশের দেশে পাচার করেছেন।

চক্রের অন্যতম আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করত। এরই মধ্যে এই অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, দেশের হাসপাতালের তথ্য আমরা পাইনি। তবে তারা পাশের দেশে কোনো হাসপাতাল-ক্লিনিকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতেন, সে বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আসামিদের।


আরো সংবাদ



premium cement