২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুহিবুল্লাহ সবসময় প্রাণনাশের হুমকি উড়িয়ে দিয়েছেন

- ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, শরণার্থী শিবিরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রচেষ্টায় কাজ করত তার এই সংগঠন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী।

কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের জন্য সে সময় একজন গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব ছিল। গত কয়েক বছর ধরে সে অভাব পূরণ করেছিলেন মুহিবুল্লাহ।

তিনি মানুষের সাথে কথা বলতেন খুব গুছিয়ে, মানুষকে বোঝানোর শক্তিটা তার খুব প্রবল ছিল। আরাকানের মূল সমস্যা, রোহ্ঙ্গিাদের জাতিগত সমস্যা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলো সবই তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।

বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সাথেই ২০১৭ সালেই বাংলাদেশে এসেছিলেন ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের রাখাইনের প্রদেশের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ওই এলাকায় অভিযান শুরু করার পর প্রাণ রক্ষার্থে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং সীমান্ত অতিক্রমের পর আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।

তোফায়েল আহমেদ বলছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আন্তর্জাতিক সংস্থার যেসব প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গিয়েছিলেন, তখন তাদের সাথে কথা বলার মতো একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন তিনি এবং তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। তার ডাকেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিশাল সমাবেশ।

তোফায়েল আহমেদ, আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম এবং আমরা সেই সময় জানতে পেরেছিলাম যে সেখানে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন এই মুহিবুল্লাহ। সেই সমাবেশের পর থেকেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেন।

গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয় এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাবার ক্ষেত্রে শর্তগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।

‘মুহিবুল্লাহ ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে’
শুধু রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসাবে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য রাখার জন্য ২০১৯ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের জন্য হোয়াইট হাউসেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাকে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেটা জেনেছিলাম যে তিনি সে সময় ট্রাম্পকে রোহিঙ্গাদের সমস্যার কথা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তোফায়েল আহমেদ জানাচ্ছেন, রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে যতো রকম সমস্যা হতো, সেগুলো তিনি ‘ভালভাবে সমাধান’ করতে পারতেন বলেই সাধারণ রোহিঙ্গারা তাদের বলেছেন। এসব কারণেই তার জনপ্রিয়তাটা ছিল তুঙ্গে।

রোহিঙ্গা শিবিরে আগে যেসব নেতাদের নাম শোনা গেছে তাদের সম্পর্কে সময়ে সময়ে কিছু নেতিবাচক কথাবার্তা শোনা গেলেও মুহিবুল্লাহ সম্পর্কে কখনো কোনো নেতিবাচক মন্তব্য আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ।

‘মুহিবুল্লাহ আমাদের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ে যেসব তথ্য প্রদান করতেন, দেখতাম তার তথ্যগুলো প্রায় সঠিকই থাকত। নির্ভরযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তার প্রতি আস্থা রাখা যেত। সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে যখন আমরা কথা বলেছি, তারাও বলেছেন একমাত্র মুহিবুল্লাহই আমাদের নেতা-মুহিবুল্লাই আমাদের মা-বাবা।’

শিবিরের রোহিঙ্গারা বলতেন তিনিই তাদের পথপ্রদর্শক, বলেন তোফায়েল আহমেদ।

আন্তজার্তিক আদালতে রোহিঙ্গাদের হয়ে মামলা মোকদ্দমা লড়ার পেছনে মুহিবুল্লার ভূমিকা অনন্য বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা আমাদের বলতেন।

‘আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের তথ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার যেসব তথ্য তিনি সরবরাহ করেছেন, সেসব কারণেই রোহিঙ্গাদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।’

তার নিরাপত্তার ঝুঁকি কি ছিল?
তোফায়েল আহমেদ বলছেন, মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ জনদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন যে, বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় সময়েই তাকে মোবাইলে বলা হতো যে ‘তোমাকে আমরা শেষ করে দেব। এমনকি রোহিঙ্গা শিবিরে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আছে তাদের তরফ থেকেও তাকে হুমকি দেয়া হতো। কিন্তু সে হুমকি তিনি উড়িয়ে দিতেন। তার একটা শক্তি ছিল যে সাধারণ মানুষ তো তার পক্ষে আছে।’

তোফায়েল আহমেদ বলছেন, এই হুমকি তিনি সবসময় অগ্রাহ্য করে বলতেন ‘আমি তো রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলছি, আমরা তো আমাদের কোওম (দাবি) নিয়ে কথা বলছি, আমাকে কেন তোমরা মারবা-আমাকে কেন হত্যা করবে-আমি তো ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য কিছু করছি না।

তোফায়েল আহমেদ মনে করছেন এই হুমকি অগ্রহ্যা করার ফল তাকে দিতে হল জীবন দিয়ে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১

সকল