১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

পিয়াসায় আসক্তদের খোঁজখবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা

পিয়াসা - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার রাতের জগতের দীর্ঘ দিনের এক পরিচিত নাম পিয়াসা। অপরাধজগতের শীর্ষ সারির অনেকের সাথেই যার জানাশোনা। ঢাকার অনেকগুলো আলোচিত ঘটনার সাথেই যার নাম জড়িয়েছে। গভীর রজনীতে এই পিয়াসা এবং তার সহযোগী মৌ’র বাসায় কারা যাতায়াত করতেন, কাদের সাথে এই দুই নারীর সম্পর্ক ছিল তার খোঁজখবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে, যারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন পিয়াসা ও মৌ’র আস্তানায়।

গত ১ আগস্ট রাতে রাজধানীর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পিয়াসার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-বিয়ার, ইয়াবা, সিসাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে পিয়াসার দেয়া তথ্যে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ’র রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। এই বাসায় রীতিমতো মদের বার পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা জানায়, এরা একে অপরের সঙ্গী এবং সহযোগী। এদের রয়েছে একটি নেটওয়ার্ক। যার ফাঁদে পড়ে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি অনেক অর্থ দণ্ডি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার আলোচিত অনেক ঘটনার সাথেই এই পিয়াসার সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই সব ঘটনায় তার নাম উঠে এসেছে। ২০১৭ সালের ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামালা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয় ওই বছরের ২৮ মার্চ তিনি এবং তার বান্ধবী বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেন সেলিমের ছেলে সাফাতকে। তার দুই বন্ধু সাদমান ও নাঈম আশরাফকেও আসামি করা হয় এই মামলায়। গত এক আগস্ট বারিধারা থেকে গ্রেফতার হওয়া পিয়াসা ছিলেন এই সাফাতের স্ত্রী। সাফাতকে বাগে এনে তাকে বিয়ে করার অভিযোগ আছে পিয়াসার বিরুদ্ধে। পরিবারের কেউ বিয়ে মেনে না নেয়ায় একপর্যায়ে সাফাত পিয়াসাকে তালাক দেন।

এ দিকে তালাকের কয়েক দিন পরেই সাফাতের বিরুদ্ধে ওই দুই তরুণী বনানী থানায় তাদেরকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রেও পিয়াসার হাত ছিল বলে জানা যায়। অন্য দিকে মামলা দায়েরের পর পিয়াসা তার সাবেক শ্বশুর দিলদারের কাছে অর্থ দাবি করেন বলে সাফাতের পরিবার থেকে পিয়াসার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। এর কিছু দিন পর আবার ওই ধর্ষণ মামলার বাদিনী অভিযোগ আনেন মামলা তুলে নিতে পিয়াসাই তাদেরকে চাপ দিচ্ছে।

সূত্র জানান, সম্প্রতি ঢাকার আরেক আলোচিত ঘটনার সাথে নাম জড়িয়ে যায় পিয়াসার। এক তরুণীর আত্মহত্যার পর আবারো আলোচনায় আসেন পিয়াসা।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ঘটনা খতিয়ে দেখতে গিয়ে তারা জানতে পারেন পিয়াসার অপরাধ নেটওয়ার্কের কথা। পিয়াসার এই নেটওয়ার্ক এভাবে চলতে থাকলেও আরো বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিয়াসা ও তার সহযোগী মরিয়ম মৌ’র বাড়িতে প্রতিদিনই বসত আসর। সেই আসরে ঢাকার অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ভিড় জমাতেন। তাদেরকে নিয়ে রাতভর চলত হৈহুল্লোড়, আর নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এর বিনিময়ে পিয়াসা কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে আসছিলেন। তার কোনো বৈধ উপার্জন না থাকলেও তিনি যেসব গাড়ি ব্যবহার করতেন তা অনেক শিল্পপতিও ব্যবহার করতে পারেন না বলে জানা যায়।

সূত্র জানায়, পিয়াসার আসরে যারা যেতেন তাদের মধ্যে অনেকের আপত্তিকর ছবি তুলে তা নিয়ে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করতেন এই পিয়াসা ও তার সহযোগীরা। এসব করতে তিনি বিভিন্ন সেক্টরের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও ব্যবহার করে আসছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিয়াসা ও মৌ’র কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন থেকে অনেকের তথ্য উদ্ধার হয়েছে। তারা কাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন, তাদের নাম বেরিয়ে আসছে। গোয়েন্দারা ওই ব্যক্তিদেরকে খোঁজখবর নিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement