১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মরিশাসে ধর্ষণের শিকার বাংলাদেশী নারী, ঢাকায় মামলা

মরিশাসে ধর্ষণের শিকার বাংলাদেশী নারী, ঢাকায় মামলা - প্রতীকী ছবি

পূর্ব আফ্রিকার দেশ মরিশাসে কাজের জন্য গিয়ে ভারতীয় এক টেক্সটাইল কোম্পানির মালিকের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশী নারী। এই ঘটনায় শনিবার বিকেলে তিনি রামপুরা থানায় মানবপাচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পৃথক ধারায় একটা মামলা করেছেন। মামলায় ভারতীয় নাগরিক অনিল কোহলিসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন তাকে পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো: আকবর হোসেন, একই প্রতিষ্ঠানের গোলাম রাব্বি, আকবর হোসেনের ভাই আক্তার হোসেন, মো: শাহ আলম, ফোরকান, সিদ্দিক, আসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরো চার-পাঁচজন।

এর আগে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চেয়েছেন। মন্ত্রণালয় তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে ওই নারীর অভিযোগ, আসামিরা তাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। তিনি ন্যায়বিচার চান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মরিশাস পৌঁছানোর পর কোম্পানির গাড়িতে করে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফায়ার মাউন্ট কোম্পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইল কোম্পানিতে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে ঠিকমত বেতন দেয়া হতো না। মরিশাসে অবস্থানরত ওই ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের কর্মীদের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন বাংলাদেশী মোহাম্মদ শাহ আলম (৪৩)। তার বাড়ি ফেনী। এই শাহ আলম ও তার সহযোগী ফুরকান, সিদ্দিক ও আসলাম একদিন তাকে বলেন, কোম্পানির মালিক তোমাকে পছন্দ করে। তুমি যদি তার সাথে থাকতে পারো তাহলে তোমার অনেক ভালো হবে। আসলামের এমন প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। এরপর শাহ আলম বিভিন্ন সময় তাকে ভয়ভীতিও দেখান।

একদিন শাহ আলম বলেন, কোম্পানির মালিক তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তাই তোমাকে মালিকের কাছে যেতে হবে। এই বলে তাকে ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক ভারতীয় নাগরিক অনিল কলির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মালিকের কক্ষে তাকে রেখে বাইরে চলে যান শাহ আলম। ওইদিনই ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক অনিল কলি তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ওই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করা আছে। তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিখিয়ে শাহ আলম ও কোম্পানির মালিক অনিল কলি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতেন তাকে। একদিন শাহ আলম প্রস্তাব দেন মালিকের বন্ধুর সাথে রাত কাটাতে। এতে তিনি রাজি না হলে নির্যাতন করা হয়।

ভ্ক্তুভোগী নারীর অভিযোগ, একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্বা হয়ে পড়লে মরিশাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেন অভিযুক্তরা। এরপর তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর শর্ত দিয়ে বলেন, মেয়েটির বাবাকে মরিশাসে আনা হবে।

এই নারী জানান, এর আগে তার বাবা বিদেশে কাজের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালে (আর.এল-১০৭৮) যান। তখন ওই রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন বলে বয়স বেশির কারণে আপনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনার মেয়েকে মরিশাস পাঠান। এরপর বেতন ২৮ হাজার টাকার কথা বলে আরেকটি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এম আক্তার অ্যান্ড সন্সের মাধ্যমে তাকে মরিশাসে পাঠানো হয়। এখন তিনি কোনো অভিযোগ করবেন না এমন শর্তে ফের গত বছরের নভেম্বরে তার (ভুক্তভোগীর) বাবাকে ওই কোম্পানিতে নেয় হয় এবং তাকে দেশে পাঠানোর কথা বলা হয়। তার বাবা সেখানে পৌঁছানোর পর বাবাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম ওই নারীকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়ে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এখন দেশে অভিযোগ করার পর তার বাবাকেও নজরবন্দী করাসহ ও মানসিকভাবে বিভিন্ন নির্যাতন করা হচ্ছে ওই দেশে।

ওই নারী জানান, দেশে ফেরার ঠিক তিন দিনের মাথার রাতের আধারে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বোন তা দেখে সেটি ঠেকান। এরপর বড় বোনকে বিস্তারিত জানান। এরপর তারা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ করলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাকে চিকিৎসাসহ কাউসেলিং সহায়তা করা হয়।

ওই নারীর দাবি, ওই কোম্পানিতে ছয়শ’র বেশি বাংলাদেশী নারী কাজ করেন। এদের মধ্যে পছন্দের নারীদের টার্গেট করে যৌন কর্মে বাধ্য করেন মোহাম্মদ শাহ আলম, ফুরকান, সিদ্দিক ও আসলাম। আর ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক অনিল কোহলি প্রায়ই নারীদের নিপীড়ন করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনে এই খবর প্রকাশের পর মরিশাসের কয়কেটি গণমাধ্যমও সংবাদটি প্রকাশ করে। এতে অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠে। এরপর অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে ভুক্তভোগী ওই নারীকে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ভুক্তভোগী এই নারী যে বর্ণনা দিয়েছেন তা ভয়াবহ। বিদেশে কাজের কথা বলে কাউকে যৌন নিপীড়ন করা বা বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করানো মানবপাচারের মধ্যে পড়ে। মরিশাস ও বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত করা। আরো কোনো বাংলদেশী নারী এমন নিপীড়নের শিকার কি না তাও খুঁজে বের করে বিচার করা উচিৎ। আশা করছি, মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে সেটিরও যথাযথ তদন্ত ও বিচার হবে বলে আশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল