১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিনা দোষে নারীর কারাভোগ : বের হয়ে নিহত, সন্দেহ

বিনা দোষে নারীর কারাভোগ : বের হয়ে নিহত, সন্দেহ - ছবি- সংগৃহীত

বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগের পর বের হওয়ার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চট্টগ্রামের এক নারী। মিনু আক্তার নামে ওই নারীর বিনা অপরাধে কারাভোগের ঘটনা দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।

গত ১৬ জুন আদালতের নির্দেশে তার মুক্তি হয়। আর ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু ঘটনাটি নিছকই সড়ক দুর্ঘটনা কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিহত নারীর পরিবারের সদস্য ও তার পক্ষের আইনজীবীরা।

পরিবারের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, মাত্র ১৩ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এতদিন তো ভালোই ছিলেন। হঠাৎ এমন কী হলো যে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন?

২০০৬ সালে এক গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যার মামলায় বিনা দোষে তিন বছর কারাভোগ করেছিলেন মিনু আক্তার। এরপর চলতি বছর বিষয়টি আদালতের নজরে এলে তা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়।

অ্যাডভোকেট মুরাদ জানান, মিনু আক্তারের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তিনি।

তারা জানিয়েছেন যে মিনু আক্তারের ছেলে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করে। তাকে আনতেই ২৮ জুন দিনের বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর ফেরেননি।

গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, তার মৃত্যু রহস্যজনক। তার তো মেইনরোডে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি ওইখানে কিভাবে গেলেন? তার পরিবারের লোকজন বলছে, পাঁচদিন পরে গিয়ে পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছে যে, মিনু আক্তার মারা গেছে।

তার অভিযোগ, মিনু আক্তারের মৃত্যুর পর দিনই তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে পুলিশ। কিন্তু তার বিনা অপরাধে জেল খাটা ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচারের কারণে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন মিনু আক্তার। তার লাশ কিভাবে বেওয়ারিশ হয়- এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাডভোকেট মুরাদ।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

এদিকে পুলিশ বলছে, মিনু আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবেই মারা গেছেন। তার শরীরে দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

চট্টগ্রামের বায়োজিদ বোস্তামী থানার এসআই খোরশেদ আলম জানান, ২৮ জুন রাতে পেট্রোলে ছিলেন একই থানার আরেক এসআই মোহাম্মদ নূরনবী। তিনি প্রায় রাত সাড়ে ৪টার দিকে খবর পান যে ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর লাশ দেখতে পান।

তিনি বলেন, গাড়ি ধাক্কা দিলে যে ধরনের আঘাত থাকে সেরকমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে অন্য কোনো আঘাত নেই। আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে, গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়ার পর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে। এরকমের চিহ্ন রয়েছে। পরে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ২৯ জুন পর্যন্ত তার কোনো পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন এসআই খোরশেদ আলম। পরে তদন্তের একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন যে তার নাম মিনু আক্তার, যিনি একটি মামলায় আসামি না হয়েও তিন বছর জেল খেটেছেন।

নিহত মিনুর ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন তার ভাই। এসআই খোরশেদ আলম জানান, মিনুর বাবা-মা কেউ নেই। তবে তার এক ভাই আছে। স্বামী না থাকলেও দুই ছেলে রয়েছে মিনুর।

তিনি বলেন, মিনু আসলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। মিনু আক্তারের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামি না হয়েও ৩ বছর কারাগারে
গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, ২০০৬ সালে এক গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ২০১৭ সালে কুলসুমী নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে ওই মামলায় মিনু আক্তারকে থানায় আত্মসমর্পণ দেখানো হয়। এতে তিন বছর জেলও খেটেছেন তিনি। এ ঘটনা জানতে পেরে আদালতে ঘটনাটি গত ২২ মার্চ উত্থাপন করেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

তিনি বলেন, আমরা মানবিক কারণে আদালতকে অবহিত করি যে যিনি জেল খাটছেন তিনি কুলসুমী আক্তার নন। তিনি বলেন, ওই নারীর তিন সন্তান এতিমখানায় বড় হচ্ছে জানতে পেরে এই ঘটনা আদালতে উত্থাপন করি আমরা।

তিনি আরো বলেন, ওই হত্যা মামলায় এর আগে কুলসুমীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি কিছু দিন জেলও খেটেছেন। তার ছবি জেলখানার বন্দীদের তালিকায় আছে, যে ছবির সাথে মিনু আক্তারের চেহারার কোনো মিল নেই।

পরে তদন্তের ভিত্তিতে গত ১৬ জুন মিনু আক্তারকে নির্দোষ পেয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন আদালত। একই সাথে তাকে যে আইনজীবীরা থানায় আত্মসমর্পণ দেখিয়েছিলেন তাদেরকেও তলব করেন আদালত। ওই ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে বলে জানান গোলাম মাওলা মুরাদ।

তিনি বলেন, ‘কী হলো, কিভাবে তিনি মারা গেলেন- এই বিষয়টি অস্বাভাবিক লাগছে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement