২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে এক পরিবারের তিনজন খুনের নেপথ্যে অনৈতিক কাজ!

- নয়া দিগন্ত

রাজধানীর মুরাদপুরের একটি বাসা থেকে বাবা-মা ও মেয়ের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন- বাবা মাসুদ রানা (৫০), মা মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও ছোট মেয়ে জান্নাতুল (২০)। হত্যার অভিযোগে বড় মেয়ে মাহজাবিনকে (২৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই বাসা থেকে মাহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্য ও তার চার বছরের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অরণ্যকে মিডফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

শনিবার সকালে অভিযুক্ত মাহজাবিন নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশকে বলে, ‘তিনজনকে মেরে ফেলেছি। আরো দু‘জন বেঁচে আছে। তাদের জীবিত নিতে চাইলে দ্রুত চলে আসেন।’ তার এমন ফোন কল পেয়ে হাজী লাল মিয়া সরকার রোডের ওই বাসায় গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে কদমতলী থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, খাবারের সাথে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে অচেতন করে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মা-বাবা ও বোনকে আগে শুক্রবার রাতে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরিবারের দাদী ছাড়া সকলকে অচেতন করে বড় মেয়ে মাহজাবিন। এরপর একে একে বাবা, মা ও বোনের হাত-পা বেঁধে ফেলে হত্যার মিশন সফল করে বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছে মাহজাবিন। আটকের পর হত্যায় জড়িত থাকার কথা অপকটে স্বীকারও করেছে সে।

মাহজাবিন জানিয়েছে, তার মা মৌসুমী ইসলাম দুই বোনকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। এ বিষয়ে বাধা দিলেও তিনি তা শুনেনি। অন্যদিকে বিষয়টি বাবা জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। বাবাও সমর্থন দিতেন তার মাকে। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে মাহজাবিন।

থানা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, মাহজাবিন তার মা-বাবা ও বোনকে হত্যার পর লাশের পাশেই বসে ছিল। এর আগে তাদের অচেতন করে হত্যা করে। ভোরের আলো ফুটলে সে মনস্ত করতে থাকে পুলিশকে বিষয়টি জানাবে। এরপর সকাল ৯টার দিকে জাতয়ি জরুরি সেবা-৯৯৯-এ কর করে বিষয়টি জানায়।

৯৯৯-এর মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, এক নারী কল করে বলছিলেন যে তাদের বাসায় তার বাবা মা ও বোনকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা হত্যা করলো সে কিছুই বলছিল না। কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। পরে বাসার ঠিকানাও দেয়। এরপর দীর্ঘক্ষণ পর সে বলে, সেই তাদের খুন করেছে। এরপর সে বলে, আমি স্যারেন্ডার করতে চাই। আমরা দ্রুত যেনো পুলিশকে পাঠাই। না হলে বাকি যে দু’জন আহত অবস্থায় পড়ে আছে তাদেরও খুন করবে। তার এম ফোন পেয়েই আমরা দেরি না করে বিষয়টি কদমতলী থানা পুলিশকে জানাই।

কদমতলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন জানান, তারা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে মাহজাবিনকে আটক করেন। তার বাবা-মা ও বোনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ওই পরিবারের শিশুসহ আরো দুজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

যে কারণে হত্যা 
মাহজাবিন পুলিশের কাছে জানিয়েছে, তার বাবা মাসুদ রানা ১২ বছর ধরে বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। কিন্তু বাবা বিদেশে থাকাকালীন ওই সময় তার মা মৌসুমী তাকে ও তার ছোট বোনকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতেন। এরই মধ্যে মাহজাবিনের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু তার মায়ের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। ছোট বোনকে দিয়েও চালাচ্ছিলেন সেই অনৈতিক কাজ। বাধ্য হয়ে মাহজাবিন তার ছোট বোনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সম্প্রতি তার মা ছোট বোনকে নিয়ে আসেন এবং আবারো একই কাজ করতে বাধ্য করছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে মাহজাবিন তার মাকে নিষেধ করেন এবং সেটি বন্ধেরও অনুরোধ করেন। কিন্তু মা শুনছিলেন না।

মাহজাবিনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে সে স্বামী ও তার মেয়েকে নিয়ে বাবা বাড়িতে আসে। এরপর রাতে খাবারের সাথে বাসার বৃদ্ধা দাদী ছাড়া সকলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তারা অচেতন হয়ে পড়লে সে বাবা, মা ও বোনের হাত বা বেঁধে তাদের হত্যা করে। এরপর সকালে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে। কল করে মাহজাবিন বলে, তিনজনকে মেরে ফেলছি। আরো দু‘জন আছে। তারা জীবিত। তাদের জীবিত নিতে চাইলে দ্রুত চলে আসেন। এরপর মাহজাবিন বাসার ঠিকানাসহ বলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

কদমতলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন বলেন, মাহজাবিন ও তার বোনকে দিয়ে তার মা খারাপ কাজ করাতো। এই ক্ষোভ থেকে সে মা, বাবা ও বোনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। এছাড়া আর কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

কদমতলী থানার ওসি মীর জামাল উদ্দিন বলেন, তিনজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মাহজাবিনের স্বামী ও সন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।


আরো সংবাদ



premium cement