২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শঙ্কিত মানুষ

- প্রতীকী ছবি

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় মানুষ যখন আতঙ্কিত; ঠিক সেই সময়ই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিও মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ রাত জেগে পাহারা দিয়েও তাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারছেন না। প্রকাশ্য দিবালোকে শতশত মানুষের চোখের সামনে দিয়ে বোমা ফাটিতে টাকা লুটের ঘটনাও ঘটছে। খোদ রাজধানীতে মারাত্মকভাবে বেড়েছে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যশোরে টহল পুলিশের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা ফাটিয়ে ও ছুরিকাহত করে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। বেলা ২টার দিকে শহরের ইউসিবিএল ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে কোতোয়ালি থানার দূরত্ব মাত্র ১৫০ গজ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, শহরের আগমনী মোটরসের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেনের ছোট ভাই এনামুল হক (২৫) দুপুরে টাকা জমা দেয়ার জন্য মোটরসাইকেলে ব্যাংকে আসেন। ইমন নামে অপর একজন তার সাথে ছিল। তারা ব্যাংকের সামনে আসার সাথে সাথে টাকার ব্যাগ বহনকারী এনামুলের ওপর হামলা চালায় ছিনতাইকারীরা। তারা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এ সময় তার দুই হাতে, বুক ও পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়া হয়। যাওয়ার সময় একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ছিনতাইকারীরা। বোমার স্প্রিন্টারে ব্যাংকের এটিএম বুথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আহত এনামুল সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ব্যাংকের সামনে যাওয়ার সাথে সাথে তিন ছিনতাইকারী তার ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার পর পুরো যশোরজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

খোদ রাজধানীতেও বেড়েছে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা। রাজধানীর অনেক এলাকা থেকে কিশোর অপরাধীদের সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য মিলেছে। কোথাও কোথাও প্রকাশ্যে মাদক সেবন চলছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সহিংস ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর ছয়তলা গলিটি এখন কিশোর অপরাধীদের অভয়ারণ্য। এই এলাকার মানুষ দিনভর চরম আতঙ্কে থাকেন। দিনভর এই রাস্তাটিজুড়ে অপরাধীদের বিচরণ। প্রকাশ্যে মাদক সেবন করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কিছুই বলতে পারেন না। অনেক সময় পুলিশের টহলগাড়ি অথবা মোটরসাইকেলের পাশে বসেই মাদক সেবন করতে দেখা যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। প্রকাশ্যেই রাজধানীর অনেক এলাকায় জুয়া খেলতে দেখা যায় শিশু-কিশোরদের। প্রকাশ্যেই রাস্তার পাশে মোবাইল ফোনে জুয়া খেলছে তারা।

রাজধানীর পল্টন এলাকার ব্যবসায়ী মোশাররফ জানান, উঠতি বয়সী মাস্তানদের যে আনাগোনা তাতে সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, রাজধানীর গুলিস্তান এখন ভাসমান সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাই ও পকেটমারের ঘটনা।
এখানে আনোয়ার নামে পুলিশের এক সদস্য রয়েছেন যার সাথে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এরা যে কাজটি করে তা হলো পথচারীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেই ছিনতাইকারী সাজিয়ে হয়রানি করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানীর ডেমরা এলাকার এক কলেজছাত্রকে এভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে পুলিশ সদস্য আনোয়ার।

রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও বেপরোয়া। এমনকি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। রাজধানীর পল্টন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের ঢাকা বিভাগের গোয়েন্দা শাখার (পরিদর্শক গেন্ডারিয়া) হেলাল উদ্দিন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মতিঝিল জোনের পরিদর্শক সুমন রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, গত সোমবার সকালে পল্টন এলাকায় বাস থেকে নামার পর তিনি পড়ে গিয়ে অচেতন হয়ে যান।
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নববধূ ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে এখন তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ফলে অভিভাবকরা এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, কন্যা নিয়ে তারা দিশেহারা। রাতদিন চরম আতঙ্কের মধ্যে কাটছে। এরপর একের পর এক ধর্ষণের খবরে তারা চরম শঙ্কিত। এসিড নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটছে।

প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও এখন দিশেহারা। রাত জেগে পাহারা দিয়েও তারা নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে পারছেন না। সম্প্রতি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল গাফফারের দু’টি গরু রাতের আঁধারে চুরি হয়।

ওই পরিবারের সদস্যরা বলেন, তারা রাত জেগে পাহারা দেন। ওই রাতে হালকা বৃষ্টি বৃষ্টি ছিল। এরই মধ্যে তাদের গরু দুটো শিকল কেটে নিয়ে যায়। গত বছর ওই পরিবারের আরো তিনটি গরু চুরি হয়। ওইবার থানায় গেলে থানা পুলিশ সন্দেহভাজন লোকদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দাখিল করতে বলেন। যে কারণে এবার আর তারা পুলিশের কাছেই যাননি।


আরো সংবাদ



premium cement