২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩০ বছর আগের হত্যা রহস্যের জট খুলল রিকশাচালকের সাক্ষ্যে

-

৩০ বছর আগে পারিবারি ছোট-খাট দ্বন্দের জের ধরে খুন হয়েছিলেন গৃহবধূ সগিরা মোর্শেদ। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে হত্যাকাণ্ডের রহস্য এত বছর পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনের চক্রান্ত হয়েছিল তার পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই। খুন হওয়া সগিরার ভাসুর ও জাসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ বলছে, দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের মধ্যে ঈর্ষা থেকে খুন হয়েছিলেন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সগিরা মোর্শেদ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) এবং মো. মারুফ রেজা (৫৯) এই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পারিবারিক কলহের জের ধরে সগিরাকে ‘শায়েস্তা করার’ পরিকল্পনা করেন সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন। এরপর স্বামী ডা. হাসান আলী চৌধুরী তার এক পেশেন্ট মারুফ রেজাকে দায়িত্ব দেন। আর এই কাজে সহযোগিতার দায়িত্ব দেয়া হয় ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ানকে।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে ভিকারুননেসা স্কুলের সামনে মোটর সাইকেলে এসে রিকশা থামিয়ে প্রথমে সগিরা মোর্শেদের হাতের বালা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মারুফ রেজা। বাধা দেয়ায় সগিরাকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

তিন দশক ধরে মামলাটি ফাইলবন্দি থাকার পর চ্যানেল-২৪ এ সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। এরপর আদালতের নজরে আনা হলে আদালত পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

ডিআইজি বনজ কুমার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে জানান, গত ২৬ জুন হাই কোর্ট ৩০ বছর আগের এই মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। অনেক কষ্টে খুঁজে বের করা হয় সগিরা মোর্শেদকে বহনকারী সেদিনের যুবক রিকশাচালককে।

সেই রিকশাচালকের নাম ছালাম মোল্লা। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৬ বছর। খুনের ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মটরসাইকেলে আসা দুইজনের একজনকে দেখে সগিরা মোর্শেদ বলে উঠেন ‘তুমি এখানে কেন? আমি তোমাকে চিনি’। চিনে ফেলার পরই তাকে গুলি করা হয়।

তখন রিকশাচালক ছালাম ‘হাইজেকার, হাইজেকার’ বলে চিৎকার দিয়ে মোটরসাইকেলের পেছনে পেছনে দৌড়াতে থাকেন। শান্তিনগরের মহিলা সমিতির অফিসের সামনে পর্যন্ত যান। কিন্তু ততক্ষণে খুনিরা পালিয়ে যান।

রিকশাচালকের ব্ক্তব্যের সূত্র ধরে বের করা হয় ‘এই চেনা ব্যক্তি’ হচ্ছে ডা. হাসানের শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান অর্থৎ খুন হওয়া সগিরার জা’য়ের ভাই। গত ১০ নভেম্বর রামপুরা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বোন ও দুলাভাইয়ের পরামর্শে সগিরা মোর্শেদকে ‘উচিৎ শিক্ষা দিতে’ মারুফ রেজার সাথে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করার কথা স্বীকার করেন তিনি।

১২ নভেম্বর ধানমন্ডি থেকে ডা. হাসান আলী এবং তার স্ত্রী সায়েদাতুলকে গ্রেফতার করা হয়। আর পরদিন মারুফ রেজাকে বেইলি রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সগিরা মোর্শেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছিলেন। রাজারবাগে একই বাড়িতে থাকা তার বড় দুই জায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলনামূলক কম ছিলো।এসব নিয়ে নানা অজুহাতে পারিবারিক সমস্যা লেগেই থাকত। তার থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

আদালতের মাধ্যমে তদন্তভার পেয়ে কার স্বার্থে আদালতে মামলাটি বছরের পর বছর ধরে স্থগিত থেকেছে তা আগে খুঁজে বের করেন নতুন তদন্ত কর্মকর্তা। আর এতেই উঠে আসে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা আনাস মাহমুদ রেজওয়ানের নাম। তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তিনি সব অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে পিবিআই তাদের অনুসন্ধানে আনাস মাহমুদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।

বুধবার হাসান আলী ও তার স্ত্রী মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের খাসকামরায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বৃহস্পতিবার জবানবান্দি দেন রেজওয়ান ও মারুফ রেজা।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মারুফ রেজা অস্ত্রটি এনেছিল মুন্না নামের একজনের কাছ থেকে। যা কাজ শেষে ফেরত দিয়েছিল বলে জানিয়েছে মারুফ। অস্ত্র সরবরাহ করা মুন্না বন্দুকযুদ্ধে বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছে বলে জানান পিআইবি প্রধান বনজ কুমার। তিনি বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটির সন্ধান করছি। বন্দুকযুদ্ধে মুন্না নিহতের সময় তার কাছে পাওয়া অস্ত্র, এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement