১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বল্প রানের ম্যাচেও ভারতের কাছে হারলো পাকিস্তান

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় উদযাপন ভারতীয় ক্রিকেটারদের - ছবি : সংগৃহীত

আবারো বিশ্বমঞ্চে ভারতের কাছে ধরাশায়ী পাকিস্তান। স্বল্প রানের শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলার ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। নিউইয়র্কের এ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬ রানে হারিয়েছে তারা।

১২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১৩ রানেই থেমেছে পাকিস্তান।

বলা যায়, এই ম্যাচ জিতে পাকিস্তানকে দেশের বিমানের টিকিট ধরিয়ে দিলো ভারত। এখনো যদিও কাগজেকলমে সম্ভাবনা বেচে আছে বাবরদের, তবে তা অবাস্তব বলা যায়। পয়েন্ট টেবিলে ভারত তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডারও নিচে এখন পাকিস্তান।

অথচ যেই ব্যাটিং নিয়ে ভারতের এত অহামিকা, তা বল হাতে চূর্ন-বিচূর্ণ করে দেন নাসিম-আমিররা। মাথা তোলে দাঁড়াতেই দেননি ভারতীয় ব্যাটারদের। গুটিয়ে দিয়েছেন নির্ধারিত ওভার শেষ হওয়ার আগেই।

ভারতের হয়ে এদিন বলার মতো রান পেয়েছেন কেবল রিশাভ পান্ত। তবে তিনিও ছিলেন না সাবলীল, ৩১ বলে ৪২ রান তুলতেই জীবন পেয়েছেন চার-চারবার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান আসে অক্ষর প্যাটেলের ব্যাট থেকে। এছাড়া কেবল দুই অংক স্পর্শ করেন রোহিত শর্মা (১৩)।

ভারতকে একদম শুরু থেকেই চেপে ধরে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়ে যায় তারা। পাকিস্তান সমর্থকদের উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন নাসিম শাহ, ফেরান বিরাট কোহলিকে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে উসমান খানকে ক্যাচ দেন কোহলি। আউট হন ৩ বলে মাত্র ৪ রানে।

সেই ধাক্কা সামলে উঠার আগেই ফের চাপে পড়ে যায় ভারত। পরের ওভারে বল হাতে এসেই আঘাত আনেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এবার ভারতীয় অধিনায়ককে ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১২ বলে ১৩ রান করেন রোহিত। ২.৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে জোড়া উইকেট হারায় পাকিস্তান।

সেখান থেকে রিশাভ ধরেন হাল। তবে শুরুতে খানিকটা নড়বড়ে ছিলেন তিনি। বারবার করেছেন মিস টাইমিং, তবে ভাগ্যবান ছিলেন বটে। জীবন পেয়েছেন চার-চারবার। তবে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে অর্ধশতক রান এনে দেন তিনিই।

এই জুটিতে আসে ৩০ বলে ৩৯ রান। অক্ষর ফেরেন নাসিমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১৮ বলে ২০ রানে। তবে এরপর সূর্য কুমারকে নিয়ে ইনিংস গুছিয়ে আনার চেষ্টা চালান পান্ত। তবে সূর্য এদিন তার রুদ্ররূপ ধরতে পারেনি, থিতু হওয়ার আগেই ফেরেন ৮ বলে ৭ রানে।

এরপর ভারতের ইনিংসের লেজ বের করে আনেন আমির। পরপর দুই বলে জোড়া উইকেট তোলে নেন তিনি। ফেরান থিতু হয়ে যাওয়া রিশাভ পান্ত ও রাবিন্দ্র জাদেযাকে। ৩১ বলে ৪২ করে বাবরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিশাভ। জাদেযা ফেরেন গোল্ডেন ডাক মেরে।

হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা দেখা দিলেও তা হয়নি, তবে ১০০’র আগে ৭ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় ভারত বাহিনী। ১৫ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯৭/৭। তখনো অবশ্য ভরসা হয়ে মাঠে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু জ্বলে উঠতে পারেননি এই ভারতীয়।

১৭.৪ ওভারে ১২ বলে মাত্র ৭ করে শিকার হন হারিসের, পরের বলে হারিস ফেরান জসপ্রিত বুমরাহকেও। এরপর ১৯তম ওভারে শেষ বলে আর্শদ্বীপ রানআউট হলে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।

ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে স্বস্তিত ছিল না পাকিস্তানও। বাবর আজম পারেননি সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দিতে। ৪.৪ ওভারে তার বিদায়ে ভাঙে ২৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। পাকিস্তান অধিনায়ককে ১৩ রানে ফেরান বুমরাহ।

তবে উসমান খানকে নিয়ে দেখেশুনে ১০ ওভার পাড়ি দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৫৭ রান আসে এই সময়ে। তবে পরের ওভারের শুরুতেই এই জুটি ভাঙেন অক্ষর, উসমানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। বাবরের সমান ১৩ রান আসে তার ব্যাটেও।

‘আনলাকি থার্টিন’ পিছু ছাড়েনি ফখর জামানেরও। ছক্কা আর চারে দারুণ শুরুর পরও তিনিও থামেন সেই ১৩ রানেই। ১২.২ ওভারে ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তবে তখনো আশার বাতি হয়ে জ্বলে ছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু তার দৌড়ও থামে খানিক বাদেই। ৪৪ বলে ৩১ করে বুমরাহর শিকার হন তিনি।

এখানেই যেন শেষ হয় পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্ন। ২৯ বলে মাত্র ৪০ রানের সমীকরণও মেলাতে পারেননি শাদাব খান, ইফতেখার আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিমরা। তাদের মাঝে ইমাদ ১৫ রান করলেও বাকিরা ফেরেন দুই অংকে না পৌঁছেই।

ইমাদ ওয়াসিম শেষ ওভারের প্রথম বলে ফিরলে ৫ বলে ১৮ রান লাগতো পাকিস্তানের। তবে ১১ রান পর্যন্ত তোলতে পারেন নাসিম শাহ। ফলে ৬ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় পাকিস্তানকে।

বিশ্বকাপে এটাই সর্বনিম্ন পুঁজি নিয়ে জিতলো কোনো দল। অবশ্য সমান ১২০ রানের পুঁজিতে জয়ের রেকর্ড আছে শ্রীলঙ্কারও, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। তবে এত কম রান ডিফেন্ড করে আগে কখনো জেতেনি ভারত।


আরো সংবাদ



premium cement