১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ আজ, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান

বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ আজ, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান - ফাইল ছবি

আজ মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। ফাইনালের আগে এ যেন আরেক ফাইনাল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে। আজ রোববার নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গড়াবে এই দুই দলের লড়াই। খেলা শুরু রাত সাড়ে ৮টায়।

ফাইনালে হয়তো কোনো দল শিরোপা জিতে, তবে ভারত-পাকিস্তান মহারণে জিতে যায় ক্রিকেট। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন বলা যায় এই দুই দলের লড়াইকে। যেখানে সাধারণ একটা ম্যাচও হয়ে উঠে অসাধারণ, ঝড় উঠে আবেগের সমুদ্দুরে; এখানে শিরোপা নয়, সম্মানটাই দেখা দেয় বড় হয়ে।

দুই মহারণ মানেই গা ছমছমে অধ্যায়। সীমান্তের সঙ্ঘাত যেন ফিরে আসে ক্রিকেটের মাঠে। লড়াইটা সম্মান, ইতিহাস, ঐতিহ্যের; লড়াইটা মতবাদ, মতভেদ আর বিশ্বাসের বৈপরীত্যের। যেখানে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না, চোখে চোখ রাঙায় তারা। আর তা যদি হয় বিশ্বকাপে, তবে আবেগের মাত্রা এখানে ভাবনার উর্ধ্বে।

দুই দলেরই আছে গৌরবময় ইতিহাস৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের দুই ফাইনালিস্ট ছিলো তারা। ভাগ করে নেয় প্রথম দুই আসরের শিরোপা। তবে সেই শুরু, সেই শেষ। এরপর আর শিরোপার দেখা পায়নি কোনো দল। এবারের বিশ্বকাপে ওই শিরোপা খরা কাটাতে চায় দুই দলই।

তবে দুই দলের শক্তিমত্তায় আছে ফারাক। যেকোনো সময়ে, যেকোনো ফরম্যাটেই ভারত প্রতিপক্ষের চিন্তার কারণ। প্রতিটি বৈশ্বিক আসরেই শিরোপার অন্যতম দাবীদার হয়েই মাঠে নামে তারা। যদিও শেষ চার অবধি তাদের লড়াইটা থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এরপরই যেন কি হয়, খেই হারিয়ে ফেলে তারা।

সেখানে পাকিস্তানকে বলা হয় ব্ল্যাক হর্স। হিসেবে না থাকলেও চমকে দিতে জানে তারা। ইমরান খানের পাকিস্তান থেকে আফ্রিদির পাকিস্তান, কখনোই মোটা দাগে হট ফেভারিট ছিলো না তারা। তবে সব শেষে ঘরে ফিরেছে তারা শিরোপা উল্লাস করেই।

দুই দলের মাঝে দীর্ঘদিন সিরিজ না গড়ালেও বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপের সুবাদে গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। যেখানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই এখন সবচেয়ে বেশি জমে উঠে দুই দলের লড়াই।

২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আইসিসির আসরে ভারত জুজু কাঁটানোর পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দাপটের সাথে ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান। তোলে নেয় ১০ উইকেটের বড় জয়। যা বিশ্বকাপের যেকোনো আসরে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়।

দ্বিতীয় জয় পেতে অবশ্য সময় লাগেনি,,২০২২ সালেই আসে সেই সুযোগ।,দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে। গ্রুপ পর্বের দেখায় ভারত জয় পেলেও সেমিফাইনালে জিতে যায় পাকিস্তান। পাকিস্তান এবার জয় পায় ৫ উইকেটে। যদিও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের ধারায় ফেরে ভারত। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বলে জয় পায় তারা।

অবশ্য পরিসংখ্যানের চোখে বৈশ্বিক লড়াইয়ে ভারত ঢের এগিয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাতবারের দেখায় ভারতের জয়ই ৫৬ম্যাচে। আর সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। যেখানে ভারতের ৯ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানের জয় সংখ্যা মাত্র ৩টি।

পরিসংখ্যান যদিও নীল আভা বেশী ছড়ায়। তবুও পাকিস্তান মানেই তো অনিশ্চয়তায় টইটম্বুর। কখন কি ঘটিয়ে ফেলায় বলাটা বড় দায়। যদিও এবার কোনো ভুলের সুযোগ নেই। অনেকটা ডু অর ডাই অবস্থানে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান। জিততেই হবে তাদের।

এতো কঠিণ সমীকরণ পাকিস্তান পেয়েছে নিজ দোষেই।
প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় বাবর আজমের দল। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা দলটার কাছে লজ্জায় ডুবে সুপার ওভারে। ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে পাকিস্তানকে কঠিণ পরীক্ষাই দিতে হবে।

এমন চ্যালেঞ্জিং অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিণ হলেও দলটা পাকিস্তান বলে সবই সম্ভব। কখন কিভাবে কি করে ফেলে, হিসেব-নিকেশ বদলে দেয়, তা কে জানে! ভারত অবশ্য ভালো অবস্থানেই আছে৷ আয়ারল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের শুভ সূচনা করে তারা।

তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে পাক-ভারত সমর্থকদের বাহিরে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, চাওয়া একটাই। ম্যাচটা জমে উঠুক, পায়ে-পা রেখে ছুটে চলুক, চোখে চোখ রেখে লড়াই হোক আর সর্বশেষে ক্রিকেটেরই জয় হোক।

 


আরো সংবাদ



premium cement