১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোঝা হবেন না তো সাকিব!

সাকিব আল হাসান - সংগৃহীত

ছোট্ট এই দেশে বলার মতো কী আছে? যা কিছু আছে তার মাঝে একটা হলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্ব ক্রিকেটে অর্জনের শূন্য খাতায়, সব চেয়ে বড় প্রাপ্তির নাম সাকিব আল হাসান। বলা যায় বিশ্বমানচিত্রে সাকিব লাল-সবুজের এক টুকরো পরিচয়।

বাংলার ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের অবদান নিয়ে লেখা বোকামি বৈকি আর কিছু নয়। তেমনি পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে পরিমাপ করা যথার্থতা পায় না। এদেশের ক্রিকেটকে অমানিশা পেরিয়ে প্রভাতের স্নিগ্ধ আভায় বিমোহিত করার সূতিকাগার যে তিনি।

তবে একা কাঁধে দেশকে বহন করতে করতে কখন যে বুড়োর খাতায় নাম লিখিয়েছেন, হয়তো তা টেরই পাননি সাকিব। তবে বাস্তবতা মানতেই হয়, হবে। বয়সের ভার বলেও যে একটা কথা আছে। ক্রিকেটটা যে সেই আগের মতো আর বসে আনতে পারছেন না তিনি। ব্যাটটাও যেন কথা শোনা ছেড়ে দিয়েছে।

শুধু বয়স নয়, জীবনের বাস্তবতা আর ব্যস্ততাও সাকিবকে যেন একটু ম্লান করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য প্রচারণা কিংবা রাজনীতি; সবই এখন ক্রিকেটের পাশে বসেছে। যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাইশগজে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি একাধারে অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে রাজত্ব করা সাকিব এখন সিংহাসন হারাচ্ছেন হর-হামেশাই।

অন্যান্য ফরম্যাট দূরে থাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কথা বলি এই ফরম্যাট নিয়েই। পরিসংখ্যান যদিও সাকিবকে মাপতে যথার্থ নয়, তবুও বাস্তবতায় চোখ দিলে পিলে চমকে উঠবেন যে কেউ! এমন না যে খুব বাজে, তবে ‘সেরা’ সাকিবের সাথে গড়পড়তা পারফরম্যান্স মানায় কী করে?

সাকিব টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছেন প্রায় দুই বছর আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ত্রি দেশীয় সিরিজে জোড়া ফিফটি হাঁকান তিনি। তবে এরপরে যেব ব্যাট উঁচিয়ে ধরা ভুলেই গেছেন সাকিব।

সেই ম্যাচের পর আরো ১৮ বার ব্যাট হাতে মাঠে নামলেও নেই কোনো ফিফটি, এমনকি নেই চল্লিশোর্ধ কোনো ইনিংসও। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৮*। এমনকি সেই বিশ্বকাপেও ব্যর্থ ছিলেন সাকিব। ৫ ম্যাচে করেন ৮.৮০ গড় ও ৯৫.৬৫ স্ট্রাইকরেটে মাত্র ৪৪ রান!

সব মিলিয়ে এই ১৮ ইনিংসে সাকিবের রান মোটে ২৫৭।
যেখানে সাকিবের গড় তার ক্যারিয়ার গড় থেকেও কম, ১৯.৭৬। যেখানে সাকিব ১২০ ইনিংসে রান তুলেছেন প্রায় ২৪ গড়ে। এই রান তুলতে তিনি বল খরচ করেছেন ২২১টি। যেখানে স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৬.৫৮।

বল হাতেও এই সময়ের করতে পারেননি নামের প্রতি সুবিচার, ভারসাম্য ধরে রাখলেও ১৯ ইনিংসে উইকেট সংখ্যা মাত্র ২৪টি। যেখানে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১ ম্যাচে ৫ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ইনিংসে নেন ৪ উইকেট।

তবে দুর্দশার শুরু সেই নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই। ২০২১ সালের জুলাওয়ে এক বছরের বিরতি শেষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফেরেন সাকিব। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত সাকিব ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছেন ৪৩ বার।

এই সময়ে সাকিবের ব্যাটে এসেছে ৮৭৩ রান। যেখানে তার গড় ২৩ ছুঁই ছুঁই হলেও, এই রান তুলতে সাকিব বল খরচ করেছেন ৭৩৫। ফলে তার স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১১৮। উইকেট সংখ্যা ৫৪।

তবে ছোট দল খ্যাত জিম্বাবুয়ে, ওমান, আয়ারল্যান্ডের আর পাপুয়ানিউগিনিকে বাদ দিলে সাকিবের পারফর্ম আরো করুণ। ২৯ ইনিংসে রান ৫৭৬। আর গড় ১৯.৮৬। কমে আসে স্ট্রাইকরেটও, ১১৬।

উইকেট সংখ্যাও নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে। অর্থাৎ ৪৫ ইনিংসে বল হারে সাকিব উইকেট নিয়েছেন ৩০টি!

খালি চোখেই বুঝা যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে সাকিবের পারফরম্যান্সে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে চোখের সমস্যা তো রয়েছেই। ব্যাটে-বলে করাই তার জন্যে হয়ে দাঁড়িয়েছে কষ্টসাধ্য। এমতাবস্থায় বিশ্বকাপে কি করতে পারেন সাকিব, তা নিয়ে দ্বিধা রয়েই গেলো।

এই দ্বিধা নিয়েই বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে আগামীকাল। যেখানে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। টেক্সাসের গ্রান্ট প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গড়াবে এই লড়াই। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায়।


আরো সংবাদ



premium cement