২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তৌহিদ হৃদয়ের ভাঙা-গড়ার উপাখ্যান

তৌহিদ হৃদয় - ছবি : সংগৃহীত

অপ্রতিরোধ্য তৌহিদ হৃদয় ছুটে চলেছেন অবিরাম ধারায়, সাধ্যি কার তাকে আটকায়? চোটে পড়ে খেলতে পারেননি চট্টগ্রাম পর্ব, তাতে কী আসে যায়, তবুও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি, সবার ওপরে নাম তার তালিকায়। ৮ ম্যাচে ৫৩.২৯ গড়ে ৩৭৩ রান তার, স্ট্রাইকরেটটাও চোখে লাগার মতো, ১৫০ ছুঁই ছুঁই করে। একবার ভাবুন তো, যদি চোটে না পড়তেন, তবে কি হতো!

প্রতিনিয়ত যেন নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন হৃদয়, ব্যাটে যেন তার ভর করেছে রাজ্যের বিস্ময়! তৌহিদ হৃদয়কে আউট করাই যেন বোলারদের জন্য এবারের বিপিএলে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ পারছেন সেই চ্যালেঞ্জ জয় করতে, কেউ পারছেন না। যারা পাচ্ছেন, বলা যায় তারাও অনেক দেরি করে ফেলছেন। ৮ ম্যাচ খেলেই ৫ ফিফটি তুলে নিয়েছেন হৃদয়।

‘ধৈর্যের ফল মিষ্ট হয়’ প্রবাদ বাক্যটা যেন এখন শুধুই হৃদয়ময়। আজ যেখানে ‘হৃদয় হৃদয়’ জয়ধ্বনি উঠে, বছরখানেক আগেও এই জায়গায় কখনো কি ভেবেছিলেন নিজেকে? এতোটা ভেবেছিলেন কিনা জানা নেই, তবে নিজের সাথে নিজেই লড়াইটা করে গেছেন অবিরত। নিজেকে ভেঙেছেন, নতুন করে গড়েছেন; পুড়ে পুড়ে খাঁটি করেছেন।

‘সফলতার পথ যে মসৃণ নয়, সাহসের সাথে অবিরাম লড়াই এনে দেয় বিজয়।’ শব্দগুলো যেন মনে গেঁথে রেখেছিলেন তৌহিদ হৃদয়। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, একদিন নিজেকে প্রমাণ করবেন। কারণটা স্পষ্ট, বাঙালি বরাবরই রক্তগরম জাতি; সফলতায় মাথায় তোলে, অন্যথায় দেয় লাথি। সুতরাং, জিততে চাইলে সফল হতেই হবে, সফল হয়েই দেখিয়ে দিতে হবে।

এবারের বিপিএলে সফল হয়েই নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন হৃদয়। সম্ভাবনা আগেও ছিল, কিন্তু তা যেন প্রস্ফুটিত হচ্ছিলো না। গত আসরেও হৃদয় এমন নির্দয় ছিলেন না, ছিলো না তার ব্যাটে এতো আগ্রাসন। গত আসরে ফরচুন বরিশালের হয়ে ১০ ইনিংসে করেন মাত্র ১৩৬ রান। ছিল না ধারাবাহিকতা, গড়টাও ছিল মাত্র ১৭। স্ট্রাইকরেটের অবস্থা আরো ভয়াবহ, হয়নি বল সমানও; ৯৭.৮৪।

তবে হৃদয় হাস্যরসের পাত্র হয়ে ওঠেন ফাইনাল ম্যাচে। ফাইনালে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হৃদয়ের বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে হেরে যায় ফরচুন বরিশাল। ফলে সরব হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, চারদিকে ওঠে সমালোচনার ঝড়; কতো নিন্দা, কতো ট্রল।

তখনই হয়তো তৌহিদ হৃদয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন, সুযোগ আসলে বদলা নেবেন। আর সফলতার থেকে বড় প্রতিশোধ আর কিইবা হতে পারে? সফল হয়েই বদলা নিলেন তিনি। সেদিন তাকে নিয়ে যাদের মুখ ছিল বিষাদমাখা, আজ যেন তাদের মুখেই খুশীর ফোয়ারা। যেই তৌহিদ হৃদয় সেদিন সবার কাছে হয়ে উঠেছিলেন তিক্ত, আজ যেন তাকে ঘিরেই সবাই তৃপ্ত। হৃদয় সত্যিই জিতে নিয়েছেন হৃদয়। কোথায় গিয়ে থামেন হৃদয়, এখন শুধু তাই দেখার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement