২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয় পেল ফরচুন বরিশাল

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয় পেল ফরচুন বরিশাল - ছবি : সংগৃহীত

জয়ের জন্য তখনো বরিশালের প্রয়োজন ২৬ বলে ৫২ রান, হাতে ৪ উইকেট। বলার মতো ব্যাটসম্যানও নেই কেউ, ফলে পরাজয় যেন চোখ রাঙাচ্ছিল বলা যায়। তবে সেখান থেকেই ৪ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পায় বরিশাল। সেই সাথে আসরের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটাই যেন সিলেটবাসী উপহার হিসেবে পেয়ে যায়। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন এনামুল হক বিজয়।

ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিঁড়ে এনামুল হক বিজয় এই দিন আবির্ভূত হন বিধ্বংসী রূপে। দ্বিতীয় ওভারে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেন বিজয়। সমালোচকদের জবাব দেয়ার শুরুটা সেখান থেকেই, পাওয়ার প্লেতেই তুলে নেন অর্ধশতক। ২৭ বলে ৪ চার আর ৫ ছক্কায় পেয়ে যান এবারের বিপিএলের প্রথম ফিফটি। বিজয়ের এমন তেজস্বী ব্যাটিংয়ে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৭ রান আসে পাওয়ার প্লেতে। ১০ রান করে আউট হন সাইফ হাসান।

এদিকে ভুলে যাবার মতো একটা দিন পাড় করলেন সাকিব। পারেননি স্বরূপে দেখা দিতে, পারেননি সমর্থকদের চাহিদা মেটাতে। বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও ব্যর্থতার দেখা মিলেছে। বল হাতে ৩ ওভারে ৩৫ রান দেয়ার পর ব্যাট হাতেও ফিরেন দ্রুত, আউট হন ৬ বলে মাত্র ২ রানে। এমন বাজে দিন সাকিব খুব কমই দেখেছেন সাকিব ক্যারিয়ারে।

সাকিব ফেরার পরের বলেই ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। নিহাদুজ্জামানের ওয়াইড ডেলিভারিতে দাগ ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। ফলে মাহমুদউল্লাহ যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, স্কোরকার্ডে নামের পাশে চারটা শূন্য! রান-০, বল-০, চার-০, ছয়-০! অর্থাৎ কোনো বল না খেলেই আউট!

ব্যাটসম্যানদের এমন হতাশামাখা ফেরার একটা গালভরা নাম আছে ক্রিকেটে, ‘ডায়মন্ড ডাক!’

জোড়া উইকেটের ধাক্কায় যেন পথ হারায় বরিশাল, ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংস। পাওয়ার প্লের পরের ৪ ওভারে আসে মোটে ১২ রান। সাকিব, মাহমুদউল্লাহর পর নিহাদুজ্জামানেরই শিকার হয়ে ৩ রান করে ফিরেন চতুরঙ্গা ডি সিলভাও। তবে একপাশ আগলে দলের হাল ধরে খেলতে থাকেন বিজয়। তবে ৫০ বলে ৭৮ রান করে মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার হলে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ দেখা দেয় বরিশালের আকাশে।

এমতাবস্থায় সবাই ইফতেখারের দিকে তাকিয়ে থাকলেও হতাশ করেছেন তিনি। ২০ বলে ১৩ রান করে সেই নিহাদুজ্জামানেরই শিকার হন ইফতেখার। এরপরের ভাবনার বাহিরে থেকে এসে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন করিম জানাত। সালমান হোসেনকে সাথে নিয়ে গড়েন ২৩ বলে ৫০ রানের অবিশ্বাস্য জুটি। যদিও শেষ ওভারে যখন ২ রান প্রয়োজন, তখন আউট হয়ে যান জানাত। তবে তার ১২ বলে ৩১ রানের ইনিংসটাই মুলত জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

শেষ ওভারে প্রথম বলে করিম জানাত আউট হলেও জয় আটকে থাকেনি। পরের বলেই চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ওয়াসিম জুনিয়র। সালমান অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ১৮ রানে। তাকেও ধন্যবাদ দিতে হয়, শুরুটা ধীর হলেও ১৯তম ওভারে প্রয়োজনীয় ১৪ রান আসে তার ব্যাটে। বিপরীতে এক নিহাদুজ্জামান ১৭ রানে শিকার করেন ৪ উইকেট।

এর আগে কার্টিস ক্যাম্ফারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বরিশালকে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। একটা সময় যখন মনে হচ্ছিল মান বাঁচানো সংগ্রহ পেতেই ছুটছে চট্টগ্রাম, তখন শেষ ৪ ওভারে ৫৭ রান যোগ করে চট্টগ্রামকে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানের সংগ্রহ এনে দেন ক্যাম্ফার।

এই দিন টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই মেহেদী মারুফকে হারায় চট্টগ্রাম। ৫ রানে তাকে ফেরান ওয়াসিম জুনিয়র। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ ব্যাট করতে থাকেন উন্মুক্ত চাঁদ ও ম্যাক্স ও'ডাউড। তাদের ২৫ রানের জুটি ভাঙে ১৬ রান করে উন্মুক্ত চাঁদ, তাকে ফেরান খালেদ আহমেদ। খালেদের দ্বিতীয় শিকার ম্যাক্স, তার ব্যাটে আসে ৩৩ রান।

আউট হবার আগে আফিফ হোসেনকে সাথে নিয়ে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখান ম্যাক্স। দুজনের জুটিতে আসে ৪২ রান। ম্যাক্স আউট হবার পর দ্রুত ফিরেন অধিনায়ক শুভাগত হোমও, তাকে ফেরান কামরুল ইসলা রাব্বি। পরের ওভারে এসে আফিফকেও ফেরান রাব্বি। ফলে শেষ ২৩ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় শেষ হয় আফিফের ৩৭ রানের ইনিংস।

এরপরের সময়টা প্রায় একাই লড়ে যান কার্টিস ক্যাম্ফার। ইরফান শুক্কুরকে সাথে নিয়ে গড়েন ৪০ বলে হার না মানা ৬৫ রানের জুটি। ইরফান শুক্কুর ১৮ বলে মাত্র ২০ রান করলেও বিধ্বংসী ছিল ক্যাম্ফারের ব্যাট, মাঠ ছাড়ার আগে তার নামের পাশে যোগ হয় ২৫ বলে ৪৫ রান।


আরো সংবাদ



premium cement