২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিনি সাকিব

তিনি সাকিব - ছবি : সংগৃহীত

প্রেমিকার বিদায়ে ভালোবাসার ভাঙনে, প্রেম বিরহে প্রেমিক মন যেভাবে আনমনে ঠুকরে কেঁদে উঠে; সেই অনুভূতিই যেন খুঁজে পাই সেদিন, বেদনাবিধুর এই হৃদে। যাতে রক্তক্ষরণ চলেছে, মন ভেঙে খানখান হয়েছে। কালো মেঘ আঁধার করে যেন নেমে এসেছিল আমার ঘরে। রাত কাটে নির্ঘুমে, বোবাকান্নায় অশ্রু ঝরে। সিক্ত চোখ ছুটে যায় ঘড়ির কাটায়, তাকে খুঁজে ফিরি টিভি পর্দায়। কিন্তু হায়! সে কোথায়?

অথচ যদি না হতো আড়ি, পাহাড় যদি দেয়া হতো পাড়ি৷ পাখি যদি না হতো নীড়হারা, তবে তুমিই হতে দূর আকাশের তারা। যদিও আমার গল্পে তুমিই সেরা। ইশ! সব যদি থাকতো ঠিক, লেখা হতো এক রূপকথা একাধিক। রূপকথাই তো বটে। দম বন্ধ করে, চোখের দু'পাট লাগিয়ে, মনটাকে অনুভবের গহীনে হারালে স্বপ্ন আর বাস্তবতার সংমিশ্রণে, সত্য-মিথের মিশেলে তৈরী হওয়া রূপকথাই মনে হবে তাকে। যেই রূপকথার গল্পে আজও হৃদয়ে ঢেউ তুলে, শিহরণ খেলে যায় দেহে। যেই রূপকথা বুকে আফসোসের বেদনা দিলেও আজও ঠোঁটের কোনে ফোঁটায় কিঞ্চিৎ হাসির দোলা।

যদিও হয়নি রূপকথা লেখা, তবে পেয়েছিলাম রাজকুমারের দেখা। যেই রাজকুমারে গল্পটা বেদনায় গাঁথা, তার পাওয়া হয়নি রাজকুমারীর দেখা। বলছিলাম ১৯ বিশ্বকাপের সাকিব আল হাসানের কথা। কালো মেঘে আচ্ছন্ন সেই মলাটে সাকিব আল হাসান যেন এক সুখময় গল্প। অসাধারণ, অনবদ্য, অবিশ্বাস্য বা অতিমানবীয়; এ যেনো রূপকথা কিংবা স্বপ্ন।

তামিম ইকবাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাকিব আল হাসান মন থেকে যা চান, তাই পারেন। ২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘সাকিব যদি চায় তবে এমন সব কীর্তি করতে পারেন, যা বিশ্বে কেউ দেখেনি।’ বন্ধুই তো বন্ধুকে চেনে, তার থেকে ভালো আর কে জানে? তিনি যে ভুল বলেননি, সেই বিশ্বকাপ যেন তাই দেখেছে। সেই বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে হয়ে ছিলেন উপেক্ষিত, যা তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে; করেছে আরও ক্ষিপ্ত, আরও উদ্দীপ্ত। দেশ থেকে গুরু সালাউদ্দীনকে উড়িয়ে নিয়েছিলেন ভারতে, তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন; করেছেন পরিণত।

সেই বিশ্বকাপে সাকিব ৮ ম্যাচে ৮৬ গড়ে রান করেছেন ৬০৬। যা ওই বিশ্বকাপের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। এগিয়ে থাকা দু’জন অবশ্য ম্যাচ খেলেছেন বেশি। যাহোক ২টি শতক, ৫টি অর্ধশতক, ৬০ চার, ২টি ছয় দিয়ে তিনি এই রান করেন। সর্বোচ্চ ১২৪*। বল হাতে ৩৬ গড়ে সাকিব নিয়েছেন ১১ উইকেট। সেরা ৫/২৯। আর ফিল্ডার সাকিবের ক্যাচ ৩ টি।

বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ টানা আট ইনিংসে ৪০+ রানের ইনিংস খেলেছেন সাকিব। নির্দিষ্ট এক ক্রিকেট বিশ্বকাপে ৬০০+ রান করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান সাকিব। নির্দিষ্ট এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছে সাকিব সাতবার। শচিনও সমান সাতবার, তবে খেলেছে তিনটি ইনিংস বেশি। তাছাড়া প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। আর যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে একই ম্যাচে ৫০ রান ও ৫ উইকেটের কৃতিত্ব সাকিবের।

এতো সব কীর্তি গড়েও সাকিবকে ফিরতে হয়েছে বেদনাবিধুর হৃদে। নিজের সবটা বিলিয়ে দিয়েও পারেননি তিনি নক-আউট পর্বে দলকে উঠাতে। ফলে যেমন বিশ্বকাপ শিরোপাও ছোঁয়া হয়নি, তেমনি পাওয়া হয়নি সবার থেকে এগিয়ে থেকেও আসর সেরার পুরস্কার। তবে, সাকিব প্রমাণ করেছেন, ক্রিকেট তিনি শুধুউ উপভোগ করতে আসেনি; ক্রিকেটের রাজত্বই তার।


আরো সংবাদ



premium cement