২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমাদের বিশ্বজয়ী কাপ্তান

আমাদের বিশ্বজয়ী কাপ্তান - ছবি : সংগ্রহ

আকবর আলি। বছর তিনেক আগেও যে নামটা ছিলো অপরিচিত (অনেকের কাছেই); কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ এই নামটা শহর থেকে গ্রাম, দেশ থেকে দেশান্তর, পুরুষ-নারী থেকে শিশু-বৃদ্ধ সবারই মুখে মুখে। বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্য নায়ক ও কাপ্তান আকবর আলী আজ শুধুই আকবর আলী নয়; আকবর দ্যা গ্রেট উপাধিটাও সাথে যুক্ত হয়েছে। আর হবেই না বা কেন? স্বাধীনতার পর এত বড় অর্জন যে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ! আকবর আলির হার না মানা সেই অদম্য মানসিকতার সৌজন্যেই তো এখন বাংলাদেশের আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শব্দটিও বসানো যায় অনায়াসে।

কিন্তু, আকবর আলির পথটা এত সহজ ছিল না, বিশ্বকাপের মঞ্চে নেতৃত্ব দিতে যখন আকবর আলি সাউথ আফ্রিকায়। তখন রংপুরে প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলো একমাত্র কলিজার টুকরো বোন। জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পর যখন পাকিস্তান বধের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত আকবর, তখনি জমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ওপারে পারি জমান। খেলার মুহূর্তে জায়নামাজ নিয়ে ভাইয়ের জন্য প্রার্থনায় থাকা বোন খাদিজা খাতুন রানী।

আহা! কী হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রতিটি ভাইয়ের কাছে, বোন কতটা মূল্যবান তা বলার আক্ষেপ রাখে না। মান-অভিমানের ভিড়ে বোন ভাইয়ের কাছে কলিজার টুকরা। ওই বোনটি যখন পরপারে চলে যাচ্ছে, পৃথিবীকে চিরকালের মতো বিদায় বলে, আর সেই সময় কিনা প্রিয় ভাইটি কাছে নেই; শেষবারের মতো বোনের চেহারা দেখার সৌভাগ্যও হয়নি আকবর আলির!

এদিকে চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কের পরিবারও যে চ্যাম্পিয়ন পরিবার হবে তা কী আর বলতে হয়! বোনের বিদায়ের মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা পরিবার চেপে গেল দেশকে নেতৃত্ব দিতে সাউথ আফ্রিকায় থাকা আকবর আলি থেকে! সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল, এই ব্যাপারে আকবরকে জানাবেন না তারা।

তবে আর চেপে থাকতে পারল না! আকবর জেনে গেল। প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে শুধু বলেছিল, কেন তাকে জানানো হয়নি এই সংবাদটা? এমতাবস্থায় হয়তো আকবরের গলা তখন চেপে ধরছিল। হয়তো তীব্র বেদনার নীল বিষে আওয়াজই বের হচ্ছিল না মুখ থেকে! বুকটা ফেটে যাচ্ছিল হয়তো প্রিয় বোনটার মৃত্যু শোকে। কলিজাটাও হয়তো শুকিয়ে গিয়ে থাকবে....আহ! মনে ব্যাথা!

তবে আকবর নিজেকে সামলে নিতে সময় নেননি, মনের ব্যথার উপর নিজের দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আকবর শোককে করেছিলেন শক্তি। বোন হারানোর বেদনা বুকে নিয়েই পথ দেখিয়েছেন পাঞ্জেরি! শোক কে কাতর নয়; পাথর হয়েই নিজ লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন দ্য গ্রেট। আর এরপরের গল্পটা সবারই জানা; বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, আকবরের হাতে বিশ্বকাপ! সারা দেশে আনন্দের জোয়ার। উত্তালতায় তাল-মাতাল বাংলার আকাশ বাতাস। এই আকবরের হাত ধরেই যে বাংলাদেশ জিতল অমূল্য রত্ন।

সবার মুখে যখন আনন্দ হাসি, তখন হয়ত আকবর স্মৃতিতে হাঁটছিলেন, অনুভব করছিলেন প্রিয় বোনটিকে। এমন একটা মুহূর্ত, অথচ নেই প্রিয় বোনটি। যেই বোন জায়নামাজে বসে তার সাফল্যের জন্য দু হাত তুলে দিত প্রভুর দরবারে। সেই বোনই যে আজ প্রভুর ডাকে সারা দিয়ে দুটো জময বাচ্চা রেখে চলে গেছে পরপারে। আকবর হয়তো, এমন একটা মূন্যতা অনুভব করছিলেন। হয়তো মুখের হাসির ভেতরে বুকে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো!

আজ আকবর বিশ্বজয়ী অধিনায়ক, তবে আকবরের পথচলা এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু মাত্র। আর এই পথচলায় তার শক্তি হতে পারে বোনের শোক। অনুপ্রেরণা হতে পারে বোনের সেই ইচ্ছেটা। আর তার সামনে উদাহরণ হতে পারে আধুনিক ক্রিকেটের বিরাট কোহলি। বাবার মৃত্যুতে দমে না গিয়ে বরং বাবার শোককে শক্তিতে রুপ দিয়ে,বাবার শেষ ইচ্ছে পুরনে আজ বিরাট কোহলি বিশ্বসেরা!

আমরা বিশ্বসেরা বিরাট কোহলি চাই না, কিন্তু চাই বিরাট কোহলির মতো শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে, তার দেখানো পথে হেটে তৈরী হোক আমাদেরও একজন বিশ্বসেরা। বিশ্বসেরা আকবর আলি! এমন...ই একটা চাওয়া রেখে, এমন একটা স্বপ্ন দেখে, একটা সুপ্ত ইচ্ছে রেখে প্রার্থনা করি প্রভুর তরে।

আমাদের বিশ্বজয়ী কাপ্তান!


আরো সংবাদ



premium cement

সকল