২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিপিএল : কোন দলের শক্তি কতটা

আফফান উসামা - ছবি : সংগ্রহ

ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো, পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো রহস্যময় চির অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। ২২ গজের লড়াইটায় কখন কঅ হয়ে যায়, বলাটা বড় দায়। সেখানে মার-কাটারি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন আরো একধাপ এগিয়ে! বিশ্বব্যাপী এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি তার সুযোগ নিয়েছে, ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেট আয়োজন করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা আরো রমরমা করে তুলেছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল ক্রিকেট তারই একটা অংশ। ২১ জানুয়ারি হতে চলেছে রমরমা ক্রিকেটের অষ্টম আসর।

এই আসরে অংশ নিচ্ছে ছয়টি দল। দলগুলো হলো : মিনিস্টার ঢাকা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ফর্চুন বরিশাল, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, সিলেট সানরাইজার্স ও খুলনা টাইগার্স। ইতমধ্যে প্লেয়ার ড্রাফট আর ড্রাফটের বাইরে থেকে প্লেয়ার নিয়ে দল সাজিয়ে ফেলেছে ফ্রাঞ্জাইজিগুলো। দল গঠনের লড়াইয়ে কেউ এগিয়ে কেউ পিছিয়ে থাকলেও মাঠের ক্রিকেট বরাবরই ভিন্ন। আর এখানেই ক্রিকেটের অনিশ্চয়তা! রহস্য! উত্তেজনা! আজ কথা হবে দল ও তার শক্তিমত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে-


মিনিস্টার ঢাকা : রাজধানীর দলটা নিয়ে এত নাটকীয়তা হবে, কখনো কেউ কি ভাবতে পেরেছে? যাহোক নানা নাটকীয়তা শেষে মিনিস্টার গ্রুপের হাতে ঢাকার মালিকানা এসেছে। যদিও দল গঠন ও গোছানোর কাজটা তত দিনে বিসিবিই করে ফেলেছে। ঢাকা দলে আছে বাংলার ক্রিকেটের পাঁচ সুপার স্টারের তিনজনই৷ খেলছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান ও বাংলার ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ঢাকা দলে আরো আছেন শুভাগত হোম, আরাফাত সানি, নাঈম শেখ, রুবেল হোসেন, ইমরানউজ্জামান, শফিউল ইসলাম, আরাফাত সানি, ফজল হক ফারুকি, জহুরুল ইসলাম, শামসুর রহমান, এবাদত হোসেন, মোহাম্মদ শেহজাদ, ইসুরু উদানা, কাইস আহমেদ, নাজিবউল্লাহ জাদরান, রিশাদ আহমেদ। তবে ড্রাফট শেষে তারা দলে ভিড়িয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন ক্যারাবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলকে। প্রধান কোচ করা হয়েছে মিজানুর রহমান বাবুলকে।

সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা ও শক্তিমত্তায় ঢাকা হতে পারে এবারের বিপিএল শিরোপার অন্যতম সেরা দাবীদার।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : সাবেক বিসিবি সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকন্যা নাফিসা কামাল বরাবরই পেশাদার। দল গঠন থেকে শুরু করে প্লেয়ার দেখভাল সব জায়গাতেই তারা অন্যতম সেরা। ড্রাফট বা ড্রাফটের বাইরে থেকে পঞ্চপাণ্ডবদের পেছনে না ছুটে তারা দল গড়েছে প্রয়োজন অনুসারে।

ড্রাফটের বাইরে থেকে তারা কিনে নিয়েছে দ. আফ্রিকান কিংবদন্তী ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসিস, ইংলিশ অলরাউন্ডার মইন আলি ও ক্যারাবীয় স্পিনার সুনিল নারিনকে৷ আর দেশীদের মাঝে দলে ভিড়িয়েছিলো তারা মুস্তাফিজুর রহমানকে। আর ড্রাফটে সুযোগ পেয়েই তারা কিনে নেয় লিটন দাসকে৷ অর্থাৎ ম্যাচ উইনারে ঠাসা কুমিল্লার স্কোয়াডটা। কোচ হিসেবে তারা ধরে রেখেছে দেশ সেরা কোচ সালাউদ্দীনকে। পরামর্শ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সাবেক বাংলাদেশের প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে।

দলে আরো আছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট, করিম জানাত, শহিদুল ইসলাম, ইমরুল কায়েস, তানভীর ইসলাম, কুশল মেন্ডিস, ওশেন থমাস, আরিফুল হক, নাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, সুমন খান, মুমিনুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, পারভেজ হোসেন ইমন, আবু হায়দার রনি, শেখ মেহেদী হাসান।

ফর্চুন বরিশাল : সবার অনেক কিছুই আছে, তবে বরিশালের একজন সাকিব আছে। ভুল বলা হলো কী? এক সাকিব যে দুজনের সমান, বার বার একাধিকবার তিনি তা করেছেন প্রমাণ। বিপিএলে সুযোগ পেয়ে শুরুতেই বরিশাল বিপিএলের সেরা তারকাকেই কাছে টেনেছে। গুঞ্জন ছিলো আরও অনেক নামে, তবে দলটা সাজিয়েছে ওরা তাদের মতোন করে।

শুধুই সাকিব নয়, ওরা পেয়েছেন আরো একজন সেরাকে। যাকে বলা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রাজা, দ্য ইউনিভার্স বস যার খেতাবটা। তিনি ক্রিস গেইল। বয়স হয়েছে, আগের দিনগুলোও হারিয়েছে৷ কিন্তু নামটা যখন গেইল তখন পান থেকে চুন খসলেই কিন্তু খবর আছে!

দলে আছেন মি. চ্যাম্পিয়নও। চ্যাম্পিয়ন হবার মন্ত্র নিয়ে ডিজে ব্রাভো আসছেন বরিশালের পতাকাতলে। দলের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। পরামর্শ সবার প্রিয় ফাহিম স্যার৷ বাকি সদস্যরা হলেন- মুজিবুর রহমান, নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান রানা, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সৈকত আলী, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, সালমান হোসেন ইমন, ইরফান শুক্কুর ও মুনিম শাহরিয়ার।


চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : হিসাব কষে কষে দল গড়েছে চাটগাঁয়ের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি। বড় নামের পেছনে না ছুটে মন দিয়েছে পারফর্মারে। ড্রাফটের আগে তারা কিনে নেয় নাসুম আহমেদকে। ড্রাফটেও তাদের চাহিদা ছিল তরুণরা। তবে তারা কোচ হিসেবে রেখে দিয়েছেন গতবারের মাষ্টার মাইন্ড পল নিক্সনকে৷ ইতমধ্যে ঐতিহ্য আর দেশপ্রেমের সমন্বয়ে তাদের জার্সিও প্রকাশ করেছে চট্টলার দলটা।

দলের বাকী সদস্যরা হলেন শরিফুল ইসলাম, আফিফ হোসেন, শামীম পাটোয়ারী, মুকিদুল ইসলাম, বেনি হাওয়েল, কেনার লুইস, চ্যাডউইক ওয়ালটন, রায়াদ এমরিট, জ্যাক উইলস, নাঈম ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, আকবর আলী, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, সাব্বির রহমান, রেজাউর রহমান, এনামুল জুনিয়র, জাকের অনিক।

খুলনা টাইগার্স : আন্ডাররেটেড দল বলতে যা বুঝায় তার পুরোটাই যেন খুলনা টাইগার্স। আলোচনায় খুব একটা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খুব একটা উচ্ছ্বসিত দেখা যায় না। কিন্তু কাগজে-কলমে, অভিজ্ঞতা আর শক্তিমত্তা বিবেচনায় দারুণ একটা দল গড়েছে বাংলার ক্রিকেটের আতুঘর খ্যাত খুলনা।

ড্রাফটের আগে তারা নিশ্চিত করেছে দেশ সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে। ড্রাফট থেকে তারা নিয়েছে সৌম্য সরকার ও ইয়াসির রাব্বির মতো পরীক্ষিত পারফর্মারদের। খুলনা সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে। যেখানে সবচেয়ে পরিচিত মুখ জাতীয় দলের উদীয়মান তারকা শেখ মেহেদী হাসান। বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগ দাঁপিয়ে বেড়ানো থিসারা পেরেরা। আছেন সিকান্দার রাজাও।

এক নজরে খুলনার টাইগার্সরা : মুশফিকুর রহিম, থিসারা পেরেরা, নাভিন উল হক, ভানুকা রাজাপাকসে, শেখ মেহেদী, সৌম্য সরকার, কামরুল ইসলাম রাব্বি, ইয়াসির আলি রাব্বি, ফরহাদ রেজা, রনি তালুকদার, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, জাকের আলী অনিক, নাবিল সামাদ, সেকুগে প্রসন্ন ও সিকান্দার রাজা, সোহরাওয়ার্দী শুভ ও মোহাম্মাদ শরিফুল্লাহকে।

সিলেট সানরাইজার্স : বরাবরই দল গঠনের খেলায় একটু পিছিয়ে সিলেট দলটা। বড় নামেও ছুটে না, আবার পারফর্মারও জুটে না। কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বরাবরই অনিশ্চয়তার খেলা! সিলেট ড্রাফটের আগে সরাসরি কিনেছিলো তাসকিন আহমেদ, দীনেশ চান্দিমাল, কেসরিক উইলিয়ামসও কলিন ইনগ্রামকে।

ড্রাফট থেকে তাদের পছন্দ- মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, আল আমিন হোসেন, নাজমুল ইসলাম অপু, রবি বোপারা, অ্যাঞ্জেলো পেরেরা, এনামুল হক বিজয়, সোহাগ গাজী, অলক কাপালি, মুক্তার আলি, সিরাজ আহমেদ, মিজানুর রহমান, নাদিফ চৌধুরী, জুবায়ের হোসেন লিখন, শফিউল হায়াত হৃদয়।

নাম কিংবা অতীত ইতিহাস নয়, খেলাটা হবে পারফরম্যান্সের। যারা ভালো খেলবে, যেই দল ভালো খেলবে। শিরোপাটা তাদেরই হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement