২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জেতার আগেই হেরে বসে নেই তো কোহলিরা

জেতার আগেই হেরে বসে নেই তো কোহলিরা -

কেউ বলছেন ৬-০ হবেই। কেউ আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাথে এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপকে যোগ করে বলছেন, ১৩-০ হবে। কেউ আবার ধরি মাছ, না ছুঁই পানি গোছের মানসিকতা থেকে বলছেন, এই ম্যাচ হারলেও সেমিফাইনালে উঠতে, বা তারপরে চ্যাম্পিয়ন হতে কোনো সমস্যা হবে না। ৬-০ না হলে পাড়ায় যাতে হাস্যকর হতে না হয়, তাই নিজেকে একটু নিরাপদ জায়গায় রাখা।

রোববার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু, গ্রুপ পর্বে কোহলিদের পরের চারটি ম্যাচ কবে, কখন অনেকটাই এগিয়ে থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করছে বিরাট কোহলির ভারত। খাতায়-কলমে কোহলিরা যে সত্যিই এগিয়ে, এটা বোঝার জন্য সুনীল গাভাস্কারের অভিজ্ঞতা, সৌরভ গাঙ্গুলির মাথা না থাকলেও চলবে।

ভারতের এতখানি এগিয়ে থাকার কারণ অবশ্যই আইপিএল। এই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই আইপিএল শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কোহলি, রোহিতরা বিশ্বকাপ খেলতে নেমে পড়েছেন। ভারতীয় দলের ১৫ জন ক্রিকেটারের এ বারের আইপিএলে মোট ম্যাচ খেলার সংখ্যা যেখানে ২০০-র উপর, সেখানে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা শূন্য।

এগুলো সব তথ্য, পরিসংখ্যান, কাগজ-কলমের হিসেব। গাভাস্কার-ইমরান, আজহার-মিয়াঁদাদ, সৌরভ-আক্রম, কোহলি-বাবররা যতই বলুন, এই ম্যাচ আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই, কুরআন-গীতায় হাত রেখে এই কথা বলতে বললে তারা দু’বার ভাববেন। ২০১৬ সালে আইসিসি-র তৎকালীন সিইও ডেভ রিচার্ডসন এমনি এমনি বলেননি, তারা সব সময় চেষ্টা করেন ভারত এবং পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখতে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের এই অদৃশ্য চাপ বরাবর বড় ভূমিকা নিয়ে এসেছে। কখনো তা প্রকট হয়েছে, কখনো প্রচ্ছন্ন থেকেছে। তাই এই ম্যাচ ক্রিকেটীয় যুক্তির ধার ধারে না। এই ম্যাচে কাউকে ‘ফেভারিট’-এর তকমা দিতে গেলে ‘পূর্বাভাস না মিললে তার দায় আমার নয়’, এই বিধিসম্মত সতর্কীকরণও তার সাথে দেয়া আবশ্যিক।

ক্রিকেটীয় যুক্তিতে আসা যাক। এবার ইতিবাচক বা নেতিবাচক, দুই দিক থেকেই ভারতের সামনে সবথেকে বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারেন কোহলি নিজেই। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়বেন। এমনিতেই বড় কোনো প্রতিযোগিতা জিততে পারেননি বলে কোহলিকে প্রায়ই খোঁটা শুনতে হয়। শেষ বেলায় এই না জেতার তকমাটা তিনি গা থেকে প্রবলভাবে ঝেড়ে ফেলতে চাইবেন। অধিনায়ককে বিশ্বকাপ তুলে দিয়ে বিদায় জানাতে চাইবেন বাকিরা। এই উচাটন রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের মধ্যে যতটা না থাকবে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি থাকবে সূর্যকুমার যাদব, বরুণ চক্রবর্তীর মতো বিশ্বকাপের আসরে অনভিজ্ঞ নতুনদের। আর ভারত এবার নতুনদের উপরই বেশি ভরসা করছে।

অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়টা কোহলির কাছে কতটা চাপের, সেটা শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বোঝা গিয়েছে। এই নিয়ে কোহলিকে প্রশ্ন করা হলে মাথা গরম করে তিনি বলেন, ‘আমি তো যা বলার খোলাখুলি বলেছি। এর মধ্যে কোনো লুকোছাপা নেই। এরপর যদি কিছু মানুষের মনে হয়, আমি সবটা বলিনি, কিছু লুকিয়েছি, তা হলে আমার কিছু করার নেই।’ এটা যে চাপের বাষ্পীভবন, সেটা স্পষ্ট।

পাকিস্তানের কথায় আসা যাক। পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা আইপিএল-এর স্বাদ না পেলেও তাদের নিজস্ব পাকিস্তান সুপার লিগ আছে। সেখানেও বিদেশি ক্রিকেটাররা চুটিয়ে খেলছেন। সেখানেও প্রতিযোগিতার মান খুব একটা কম নয়। তাদের অধিনায়ক বাবর আজম পিএসএল খেলাকেই তাদের সবথেকে বড় শক্তি বলছেন।

শেষ তিন বছরে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে বাবর আজমের মতো এত রান আর কেউ করেননি। কোহলিও না। তথ্য আরো একটা আছে। ২০১৮ সাল থেকে ধরলে প্রথমে ব্যাট করে যে আটটি ম্যাচে কোহলিরা ১৬০ রানের কম করেছেন, তার প্রত্যেকটিতে হারতে হয়েছে।

সবথেকে বড় কথা, এই ৬-০, ১৩-০-র আবহে পাকিস্তানের ১৫ জনের উপর চাপের বোঝাটা সত্যিই কম। তাদের যে হারানোর কিছু নেই। সবাই তো তাদের হারিয়েই দিয়েছেন।

তাই প্রশ্নটা উঠছে, জেতার আগেই হেরে বসে নেই তো কোহলীরা?


আরো সংবাদ



premium cement