২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অস্ট্রেলিয়ার যে খেলোয়াড়রা বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে

অস্ট্রেলিয়ার যে খেলোয়াড়রা বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে -


অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা এবং ক্রিকেট সমর্থকদের অনেকে মনে করছেন অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর জন্য এই সিরিজ একটি বড় সুযোগ।

অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত চারটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে চারটিতেই ভালো ব্যবধানে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

এমনিতেই অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না বললেই চলে, যা হয় তাতে একটি ফরম্যাটেই শেষ হয়ে যায় খেলা। ২০১১ সালে বাংলাদেশে এসে অস্ট্রেলিয়া শুধু ওয়ানডে খেলে আবার ২০১৭ সালে কেবলমাত্র দুটি টেস্ট খেলে দুই দল।

অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে চারটি টি টোয়েন্টি ম্যাচের চারটিই হয়েছে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের নানা আসরে।

বিগ ব্যাশ লীগ অস্ট্রেলিয়ার বড় শক্তি
অস্ট্রেলিয়ার টি টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরু থেকেই শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। প্রতি বছর একটা মানসম্পন্ন টি টোয়েন্টি আসর অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে নানা পর্যায়ের অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটাররা বেশ কয়েকটি দেশের ক্রিকেটারদের সাথে বিভিন্ন ধরনের উইকেটে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে বিগ ব্যাশ বিশ্বের সেরা টি টোয়েন্টি লীগগুলোর একটি।

এখানে মাঠের মান, উইকেটের মান ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার স্বাদ দেয়। যার ফলে এই পর্যায়ে খেলা ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করে খুব বেশি ধুকতে হয় না।

তাই বিগ ব্যাশ লিগকে পুঁজি করে অস্ট্রেলিয়ার টি টোয়েন্টি ক্রিকেটাররা উঠে আসছে। যারা বল জোরে মারতে পারেন, উইকেট নিতে পারেন এবং মাঠে ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পারেন।

লেগ স্পিনার : অ্যাডাম জাম্পা
টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকরী বোলারদের তালিকায় লেগ স্পিনারদের সংখ্যাই বেশি। আর বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত কোন লেগ স্পিনার নেই। তাই অ্যাডাম জাম্পা হতে পারেন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি।

এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের যে টি টোয়েন্টি বোলারদের র‍্যাংকিং আছে সেই তালিকায় প্রথম দশ জনের মধ্যে নয়জনই স্পিনার।

যার মধ্যে আবার ৬ জন লেগ স্পিনার বা রিস্ট স্পিনার। অ্যাডাম জাম্পাও আছেন এই তালিকায়, সাত নম্বরে।

আর যেহেতু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন ভালো লেগ স্পিনারের মুখোমুখি হতে পারে না, তাই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও লেগ স্পিনের ঘূর্ণিতে বেশ ভুগে থাকেন।

যেমন ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টি টোয়েন্টি সিরিজের তিনটি ম্যাচে মাত্র ৪৯ রান দিয়ে আট উইকেট নেন আফগানিস্তানের রশিদ খান।

২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার শেষ টি টোয়েন্টি ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরষ্কার পান অ্যাডাম জাম্পা।

বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি মনে করেন, অ্যাডাম জাম্পাই হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি। বিশেষত মিরপুরের উইকেটে বল নিচু হয়ে আসে এবং টার্ন পাওয়া যায়।

স্টার্ক-হ্যাজলউডের পেস জুটি
কদিন ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে মিচেল স্টার্কের ইয়র্কারে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়ার দৃশ্যের একটা সমন্বয় দেখানো হয়েছে, পেস বোলিং যারা দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই ভিডিওটি বেশ দৃষ্টিনন্দন হলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকিও বটে।

মিচেল স্টার্ক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের তো বটেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের সফলতম বোলারদের একজন। দীর্ঘদেহী এই ফাস্ট বোলার টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাতের কিছু ওপরে রান দিয়ে থাকেন প্রতি ওভারে।

৩৯ ম্যাচে ৪৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি, গড় ২২ এর মতো। আর দুই উইকেট নিলে স্টার্ক হবেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫০ উইকেট নেয়া প্রথম বোলার।

সাথে আছেন জশ হ্যাজলউড। হ্যাজলউডের অবশ্য টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে খুব সখ্য নেই। তবে টেস্ট ক্রিকেটের সময়ের অন্যতম সেরা এই ফাস্ট বোলার গতি ও সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের কঠিন সময় দিতে সক্ষম তিনি।

এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩টি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন হ্যাজলউড।

নিজের বিশ্লেষণে সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি বলেন, যে কোন উইকেটে গতি আর লাইন লেন্থের সমন্বয় করতে পারেন এই ধরনের ফাস্ট বোলাররা।

মিচেল মার্শের অলরাউন্ড ফর্ম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্যই শেষ হওয়া টি টোয়েন্টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলগতভাবে ব্যর্থ হলেও ব্যাট ও বল হাতে দারুণ ভূমিকা পালন করেছেন মিচেল মার্শ।

৫ ম্যাচে প্রায় আড়াইশ রান ও ৮টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস এবং সামগ্রিক ক্রিকেট অর্জন বিবেচনা করলেও সিরিজ জয়ের আশা করাটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য কঠিন হলেও, ম্যাচের আগের দিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলও এবারে বাংলাদেশকে সমীহ করছে, বিশেষত সাকিব আল হাসানের কথা আলাদাভাবে বলছেন তারা। মিরপুরে খেলা অস্ট্রেলিয়ার শেষ ক্রিকেট ম্যাচেই সাকিব ২ ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন, সাথে করেছিলেন ৮৪ রান।

বিশেষত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বা-হাতি স্পিনারদের বলে ভুগেছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা, মূলত যেসব বা-হাতি স্পিনার ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের থেকে বল বাইরে নিয়ে যান তারা ভুগেছেন।

ক্যারিবিয়ান স্পিনার আকিল হোসেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।

ম্যাথু ওয়েডও সাকিবের কথা বলেছেন, আমরা জানি সে কী করতে পারে।

ম্যাথু ওয়েড ও সাকিব এর আগে বিগ ব্যাশ লিগে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে খেলেছেন সতীর্থ হিসেবে।

সাকিব আল হাসান, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেখায় দুই দলের সেরা বোলার ও সেরা ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত।

রান করেছেন চার ম্যাচে ৩৫ গড়ে ১৪৩, উইকেট নিয়েছেন ৫টি।

আর যেহেতু এখন লিটন দাস, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম নেই, তাই সাকিবকেই প্রধান নিশানা করছে অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট।

ওদিকে অস্ট্রেলিয়াতেও নিয়মিত টি টোয়েন্টি খেলা স্টইনিস, ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েলরা বাংলাদেশে আসেননি।

তবে দুই দলেই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি থাকলেও সাথিরা জাকির জেসির মতে বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর এটাই বড় সুযোগ।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement